বই দিচ্ছেন আলাই। নিজস্ব চিত্র
কর্মীর অভাবে বিভিন্ন সরকারি গ্রন্থাগার বন্ধ। সেখানেই বইয়ের প্রতি টান ধরে রাখতে পাঠকদের বাড়ি বিনা পারিশ্রমিকে বই পৌঁছে দিচ্ছেন প্রাথমিকের গণ্ডী পেরনো আলাই শেখ। বই পড়ার অভ্যাস বজায় রাখতে বছর দেড়েক আগে মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার সিউর গ্রামে তৈরি হয় ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার। সেখান থেকে বই নিয়ে আগ্রহী পাঠকের বাড়িতে পৌঁছে দেন আলাই। পড়া শেষ হলে আবার পুরনো বই নিয়ে দিয়ে আসেন নতুন বই।
মঙ্গলকোট ব্লকে তিনটি সরকারি পাঠাগার দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র কাশেমনগর পাঠাগার থেকেই গোতিষ্ঠা এবং লাখুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার ১০-১২টি গ্রামের পাঠকেরা নিয়মিত বই নিতেন। পাঠাগার বন্ধ থাকায় বই পড়ার আগ্রহও হারাচ্ছিলেন অনেকে। পরিস্থিতি বুঝে সিউর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনীল মিত্র প্রয়াত স্ত্রীর স্মৃতিতে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার তৈরিতে উদ্যোগী হন। এলাকার আরও কয়েকজন এগিয়ে আসেন তাঁর পাশে। ন’জনের একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে বর্তমানে পরিচালিত হয় সরকারি ভাবে নিবন্ধীকৃত করুণাময়ী স্মৃতি সাধারণ পাঠাগারটি। তবে এই পাঠাগারের সদস্য হতে কোনও চাঁদা লাগে না, শুধু ভালোবেসে বই পড়তে চাইলেই সদস্য হওয়া যায়, জানান আলাই। তিনি বলেন, ‘‘থলি ভর্তি বিভিন্ন ধরনের বই নিয়ে প্রতি গ্রামে মাসে দু’বার করে যাই। পাঠকেরা নিজেরাই বেছে নেন বই। কারও বিশেষ কোনও বই পড়ার ইচ্ছা থাকলে কাগজে লিখে দেন। পরের বার সেই বই নিয়ে যাই।”
জানা গিয়েছে, সিউর, লাখুরিয়া, আমডোব, গোপীনাথপুর, কোটালঘোষ, চাগদা, কাশেমনগর, গোতিষ্ঠার মতো গ্রামগুলিতে ইতিমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের গ্রাহক সংখ্যা চারশো ছাড়িয়েছে। আশপাশের আরও অনেক গ্রামের মানুষও এর সদস্য হতে চেয়েছেন। কিন্তু বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেওয়ার লোকের অভাবে এই মূহুর্তে পরিধি বাড়ানো যাচ্ছে না, দাবি সুনীলবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘আলাই শেখের মতো আর জনা দুই মানুষকে পাওয়া গেলে খুব সুবিধা হত।’’
পাঠাগারের আর এক কর্মকর্তা মহম্মদ সাদেক জানান, প্রথমে কয়েকশো বই কিনে পাঠাগারটি চালু করা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন মানুষ পাঠাগারে বই দান করেছেন। সব মিলিয়ে এখন হাজার খানেক বই আছে। সম্প্রতি বই কেনার জন্য জেলা পরিষদ থেকেও টাকা পেয়েছেন তাঁরা। উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বিধায়ক তথা গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।