প্রতীকী চিত্র
দৃষ্টিহীন বৃদ্ধাকে রেললাইনে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণে কে জড়িত, তা এখনও জানতে পারেনি রেলপুলিশ। তবে মেমারি স্টেশনে নির্যাতিতা ওই বৃদ্ধার উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এলাকায় বাড়ি ছিল বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সকালে জিআরপি (বর্ধমান) ওসি পীযূষকান্তি রায়ের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ মেমারি স্টেশনে তদন্তে গিয়ে মহিলার জিনিসপত্র তুলে আনে। জিআরপি ও রেল সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ) প্ল্যাটফর্মে রাতে থাকতে নিষেধ করে দিয়েছে, বলে দাবি করেছেন ভবঘুরেরাও।
আপ লাইনের উপরে মেমারি স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম। তদন্তকারীদের ধারণা, আপ লাইনের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির নীচে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি জানাজানি হতে আপ লাইনের দিকে থাকা অস্থায়ী স্টল বা হকারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুক্রবার তাঁদের কয়েকজন দাবি করেন, “দু’-এক দিন ধরে স্থানীয় বাজার খোলায় স্টেশন লাগোয়া দোকানগুলিও খুলতে শুরু করেছিল। চায়ের দোকানে ভিড় বাড়ছিল। কিন্তু মেমারি স্টেশনের ঘটনা সামনে আসতেই পরিবেশ আবার নিঝুম।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতেই দোকানে ঝাঁপ পড়ে যায়। দোকানদারদের দাবি, স্টেশন চত্বর তো বটেই শহরেও এ ধরনের ঘটনার কথা শোনা যায়নি।
রেলপুলিশ জানায়, গত ৬ জুন ওই বৃদ্ধা ধর্ষিত হয়েছেন বলে বুধবার অভিযোগ করেন মেমারি শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী। রাতেই ওই মহিলাকে উদ্ধার করে বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুলের মহিলা হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার প্রায় ১২ দিন কেটে গিয়েছে। ফলে, মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে বৃদ্ধার শারীরিক পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তদন্তকারীরা জানান, এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ বৃদ্ধা যেখানে থাকতেন সেই জায়গাটি খুঁটিয়ে দেখা হয়। তাঁর সম্বল বলতে থাকা একটি পুঁটুলির ভিতরে একটি কাপড়, কিছু ছেঁড়া কাপড় আর ওষুধ খুঁজে পায় পুলিশ। সেগুলি নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মীরা ‘কাউন্সেলিং’ করে জানতে পেরেছেন, ওই বৃদ্ধা নৈহাটির হাজিনগর এলাকায় থাকতেন। তাঁর স্বামী চটকলের কর্মী ছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে আট-ন’বছর ধরে মেমারি স্টেশনে রয়েছেন তিনি।
ওই বৃদ্ধার মতো প্ল্যাটফর্মে থাকতেন আরও কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে দু’জন বলেন, “পুলিশের কথামতো ওঁর জিনিসপত্র পাহারা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে আমাদের বলে গেল, রাতে প্ল্যাটফর্মে থাকা যাবে না। সন্ধ্যা হলেই প্ল্যাটফর্ম ছাড়তে হবে। ফের বিপদ ঘটলে কে দায়িত্ব নেবে!”