প্রতীকী ছবি।
‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থার জেরে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে কতটা প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং মনোবিদদের মধ্যে। সকলেরই মত, এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে।
সম্প্রতি অনলাইন ক্লাস না করতে পারায় কেরলের মালাপ্পুরমে এবং হাওড়ার রাজচন্দ্রপুরে ছাত্রীরা আত্মহত্যা করেছে। মনোবিদদের মতে, ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দ্বিবিধ সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথমত, পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছে, জেলার প্রায় ২৫ শতাংশ পড়ুয়া এই ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ক্লাসের সহপাঠীদের থেকে পিছিয়ে পড়ার একটা ভয় কাজ করছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে কাঁকসা, পাণ্ডবেশ্বর-সহ কয়েকটি এলাকার পড়ুয়ারা বলেছে, “বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক কার্যত নেই এখন। স্কুল খুললে বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোনায় পাল্লা দেব কী ভাবে?”
দ্বিতীয়ত, যারা ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, তাদের অনেকের মধ্যে অন্য রকম চাপ প্রত্যক্ষ করছেন শিক্ষকেরা। বারাবনির এক স্কুল শিক্ষক বলেন, “পড়ুয়ারা প্রায়ই জানতে চাইছে, ‘স্যর স্কুল কবে খুলবে’। টানা বাড়িতে বসে থাকাটা ওদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।”
বাম প্রভাবিক শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র (এবিটিএ) জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষও মনে করেন, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে মেশা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলা— এ সব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পড়ুয়ারা। বাড়িতে থাকতে থাকতে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সব থেকে বড় বিষয়, পড়ুয়াদের দৈনন্দিন অভ্যাসটাই বদলে যাচ্ছে।’’ এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদেরই পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে বলে মনে করেন তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়।
পক্ষান্তরে, এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের দায়িত্ব সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, মনে করছেন মনোবিদেরা। দুর্গাপুরের শোভাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক তথা মনোবিদ ইমন পাল জানান, পড়ুয়াদের দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে ‘অনলাইন’ পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখছেন অনেক বাবা-মা। ফলে, মানসিক চাপ পড়ছে তাদের উপরে। আবার যারা ‘অনলাইন’-শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘খারাপ লাগা’ কাজ করছে। ইমনদেবীর পরামর্শ, ‘‘দেখতে হবে, অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না বলে পড়ুয়ারা যেন বিমর্ষ না হয়। বাড়িতে যদি পাঠ্যবই থাকে এবং বাবা-মা যদি তাদের পড়িয়ে দিতে পারেন, নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্র অভ্যাস করানো সম্ভব হয়, তা হলেও অনেকটা সমস্যা মিটতে পারে।’’ পাশাপাশি, পড়ুয়াদের প্রাত্যহিক ‘রুটিন’ যতটা সম্ভব বজায় রাখার দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অজয় পালও বলেন, ‘‘কোনও পড়ুয়া যেন নিজেদের বঞ্চিত মনে না করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে, কোনও পরিকল্পনা করা যায় কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে।’’