পড়ে রয়েছে অর্ধসমাপ্ত বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
কেউ চালকলের কর্মী। কেউ মৎস্যজীবী। কেউ আবার ভ্যানে আনাজ বিক্রি করে সংসার চালান। সরকারি অনুদানে পাকা বাড়ি তৈরির আশায় কাঁচা ঘর ভেঙে ত্রিপলের ছাউনিতে মাথা গুঁজেছেন অনেকে। কেউ ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছেন। কিন্তু সরকারি অনুদান না মেলায় পাকাবাড়ির স্বপ্ন এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে। বর্ধমান শহরেই দেখা গিয়েছে এই ছবি।
বর্ধমানের পুরপ্রধান, তৃণমূলের পরেশ সরকার বলেন, “উপভোক্তারা দুর্দশার মুখে পড়েছেন। আমরা দুঃখিত। তাঁরা যাতে দ্রুত টাকা পান, তার সব চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ ভিত তৈরি থেকে বাড়ি শেষ হওয়া পর্যন্ত ধাপে-ধাপে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে থাকে সরকার। গত কয়েক মাস ধরে তাঁরা অনুদান পাচ্ছেন না বলে পুরসভা সূত্রে খবর। অনেক ক্ষেত্রে ভিত তৈরিতেই আটকে রয়েছে বাড়ি নির্মাণের কাজ। অনেক বাড়ির নির্মাণকাজ অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। অনেকে বাড়ির ছাদ তৈরির কাজও শেষ করতে পারেননি। উপভোক্তাদের দাবি, সরকারি অনুদান কবে মিলবে, তা পুরসভা জানাতে পারছে না। ২০২১-২২ সালে অনুমোদিত ১৭৩৭ জন উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিতে বলতে পারছে না পুরসভা।
উপভোক্তাদের দাবি, পুরসভার তরফে তাঁদের জানানো হয়েছিল, বাড়ির টাকা চলে এসেছে। দ্রুত ভিত তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে বাড়ি পিছু প্রকল্পের তিন লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ফেরত চলে যাবে। উপভোক্তাদের বেশির ভাগই মাটির বাড়িতে বাস করেন। পুরসভার নির্দেশ পেয়েই চড়া সুদে টাকা ধার করে বাড়ি ভেঙেছেন তাঁরা। এখন ধার শোধ করা এবং বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে তাঁদের।
পুরসভার তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ সালে ৬৬৪টি বাড়ির মধ্যে ১১৪টির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি বাড়িগুলির মধ্যে ভিত হওয়ার পরে ৩০৩টি, মাঝপথে ১৪৭টি ও ছাদ হওয়ার মুখে ৮০টি বাড়ির কাজ আটকে রয়েছে। ২০১৯-২০ সালে বর্ধমান শহরে ২১০০টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন পায় পুরসভা। নানা কারণে ২৩২টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন আটকে যায়। অবশিষ্ট ১৮৬৮টির মধ্যে ১০৫টি বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ভিতেই আটকে রয়েছে ১০৫১টি বাড়ির কাজ।
পুরসভার তথ্য বলছে ২০১৮-১৯ এবং ২০২০-২১ সালে অনুমোদিত বাড়িগুলির মধ্যে ১৩৫৪টির নির্মাণকাজ আটকে গিয়েছে ভিত খোঁড়ার পরেই। মাঝপথে ও ছাদ পর্যন্ত হয়ে আটকে রয়েছে যথাক্রমে ৭১৬ এবং ২২৩টি বাড়ির কাজ। পুরসভার দাবি, নতুন বোর্ড গঠনের পরে, উপভোক্তাদের সাড়ে ১২ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে এখনও ১২ কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে।
রবীন মল্লিক নামে এক উপভোক্তার দাবি, “বাড়ি ভেঙে পরের জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছি। ছেলেরা ক্লাব ঘরে থাকছে। যাঁদের জমিতে রয়েছি, তাঁরা উঠে যেতে বলছেন।’’ কোমল বিবি নামে এক জনের দাবি, “ভিত খোঁড়ার পরে আর কাজ এগোয়নি। বারবার পুরসভায় গিয়েছি। তবু টাকা আসেনি। সংসার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে কী ভাবে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছি, বলে বোঝাতে পারব না।’’
বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের দাবি, “টাকা আটকে থাকার নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ রাজনৈতিক মনোভাব। সাময়িক সমস্যা দেখা দিলেও মুখ্যমন্ত্রী তা কাটিয়ে দেবেন।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, “প্রকল্পে রাজ্যেরও অংশ রয়েছে। কেন্দ্রের টাকা পাওয়া গিয়েছে বলেই উপভোক্তারা বাড়ি তৈরি শুরু করতে পেরেছেন। রাজ্য সরকার তার অংশের টাকা দিচ্ছে না বলেই উপভোক্তাদের দুর্দশায় পড়তে হচ্ছে।’’