সংস্কারের পরে এই চেহারায় ফিরেছে বর্ধমান স্টেশনের ভেঙে পড়া ভবনটি। রবিবার থেকে এই প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের জন্য। নিজস্ব চিত্র
ভেঙে পড়ার দু’মাসের মাথায় ফের চালু হল বর্ধমান স্টেশনের মূল প্রবেশপথ। শতাধিক বছরের পুরনো ভবনটির নকশা এক রকম রেখে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান রেলের কর্তারা। এ দিন ভবনের ওই অংশটি দেখে খুশি নিত্যযাত্রী থেকে বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের অনেকেও। মূল প্রবেশপথ ও এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া জায়গার ব্যবসায়ীরা জানান, ঘটনার পর থেকে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছিল। এ দিনের পর থেকে আবার আগের মতো ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
এ দিন দুপুরে ডিআরএম ইশাক খান বলেন, ‘‘যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে আমরা দ্রুত ভবন সংস্কারে হাত লাগিয়েছিলাম। দু’মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ করে মূল প্রবেশপথ খুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে মজবুত করে ভেঙে যাওয়া অংশটি সংস্কার করা হয়েছে।’’ রেল সূত্রে জানা যায়, এই কাজের জন্য খড়্গপুর আইআইটি ও যাদবপুরের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
এ দিন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোই ঝুল বারান্দা তৈরি করা হয়েছে। ইস্পাতের কাঠামো থামের উপরে আগের মতো ইট দিয়ে ঘেরা হয়েছে। তার উপরে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। ভবনের উপরে বসানো হয়েছে আগের মতো ঘড়ি ও বর্ধমান স্টেশনের নামের বোর্ড। প্রবেশপথের সামনেও সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। রেলের একটি সূত্র জানায়, আনুমানিক ২৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এই কাজে। রেল-ইতিহাস গবেষক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (কলা) রমেন সর বলেন, ‘‘যে অংশ ভেঙে পড়েছিল, অনেকটাই তার মতো দেখতে হয়েছে নতুন ভবনটি। এত দ্রুত সংস্কার করে আগের চেহারা ফিরিয়ে দেওয়া কিন্তু মুখের কথা ছিল না!’’
গত ৪ জানুয়ারি রাত ৮টা নাগাদ স্টেশনের শতাব্দী প্রাচীন ভবনের মূল প্রবেশপথের একাংশ ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয় এক জনের। মৃতের পরিচয় এখনও পুলিশ জানতে পারেনি। ঘটনার পরেই তিন জনের তদন্তকারী দল গঠন করে রেল। রেল সূত্রে জানা যায়, ওই দল রিপোর্ট দিয়ে জানায়, ঠিকাদারের গাফিলতিতেই ভবনের একাংশ ভেঙে পড়েছিল। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে রেল আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ দিন এডিআরএম (হাওড়া)-সহ রেলের অন্য আধিকারিকেরা বর্ধমান স্টেশন পরিদর্শন করেন। ডিআরএম জানান, বুধবার পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার বর্ধমান স্টেশন পরিদর্শনে আসতে পারেন।
এ দিন থেকে মূল প্রবেশপথ খুলে দেওয়ায় যাত্রীরা খুশি। মেমারির মৌসুমী মুখোপাধ্যায় থেকে বর্ধমানের শ্রীকান্ত বসু, সকলেই বলেন, ‘‘১ নম্বর প্ল্যাটফর্মটা ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। অনেকটা পথ ঘুরে ব্যবহার করতে হচ্ছিল। এই পথটি খুলে যাওয়ায় সুবিধা হল।’’ ওই প্ল্যাটফর্মের বই-ব্যবসায়ী দীনেশ জৈন বলেন, ‘‘বই তো দূর, সংবাদপত্রও বিক্রি হচ্ছিল না। এ বার সেই অবস্থা কাটবে বলেই মনে হয়।’’ ওই প্রবেশপথে আপাতত আরপিএফ এবং রেল পুলিশকে কড়া নজরদারি করার কথা বলেছেন বর্ধমান স্টেশন কর্তৃপক্ষ। বর্ধমানের গবেষক সর্বজিৎ যশ বলেন, ‘‘প্রাচীন ভবনের আদল আগের মতো আসবে কি না, সে নিয়ে অনেকের মনে সংশয় ছিল। রেল তা কাটিয়ে দিয়েছে।’’