মার্কশিট নেওয়ার লাইনে গোল দাগ দেওয়ার কাজ চলছে বর্ধমানের একটি স্কুলে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র নিজস্ব চিত্র
কেউ দূরত্ব-বিধি মেনে লাইন দেওয়ার জন্য গোল দাগ কেটেছেন, কেউ আবার ভিড় এড়াতে একাধিক কাউন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার মাধ্যমিকের ফল বেরনোর পরে, মার্কশিট বিলি করার জন্য এমন নানা পদক্ষেপ করেছেন জেলার বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে মার্কশিট পড়ুয়াদের নয়, অভিভাবকদের হাতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সব স্কুলই।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করার কথা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। সকাল ১০টা থেকে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে স্কুলগুলির হাতে মার্কশিট তুলে দেওয়া হবে। দুপুর থেকে স্কুলগুলি পড়ুয়াদের হাতে মার্কশিট দেওয়া শুরু করবে বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘যেখান থেকে মার্কশিট দেওয়া হবে, সেই ঘর বা জায়গায় স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করতে বলা হয়েছে প্রতিটি স্কুলকে। করোনা-বিধি মেনে মার্কশিট দেওয়া বাধ্যতামূলক। মার্কশিট-অ্যাডমিট অভিভাবকদের হাতে তুলে দিতে হবে।’’
বেশিরভাগ স্কুলই সোমবার বিকেল পর্যন্ত স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করেনি বলে অভিযোগ। তবে বিভিন্ন স্কুলের কর্তারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বা ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন, মার্কশিট নিতে এলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও পরিচয়পত্রও আনতে হবে অভিভাবকদের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ৪৯,৬২২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। এ বার সেই সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে কত জনের নম্বর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে গিয়েছে, তা তাদের জানা নেই। ওই দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘স্কুল থেকে নম্বর সরাসরি পর্ষদের নিজস্ব পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। তাই আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।’’
গত বছর মার্কশিট বিলি নিয়ে বিভিন্ন স্কুল বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কেন্দ্রগুলি থেকে কোভিড-বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সে জন্যে স্কুলগুলি প্রথম থেকেই কোভিড-বিধি মানার ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ গুপ্ত বলেন, “স্কুলের বাইরে স্যানিটাইজ়ার থাকবে। মাস্ক ছাড়া, কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অভিভাবক-অভিভাবিকাদের রেজিস্টার খাতাতে সই করতে হবে না, মার্কশিটের প্রতিলিপি আমরাই দেব। সেখানেই প্রাপ্তি স্বীকার করে সই করে মার্কশিট নিয়ে যাবেন। ফলে, কাছাকাছি আসারও সুযোগ অনেক কমে যাবে।’’
কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মহকুমার ১৬৮টি স্কুলের মার্কশিটের প্যাকেট বিলি হবে। সে জন্যে বৃহস্পতিবারই স্কুলে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করা হয়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষের দাবি, “মার্কশিট নেওয়ার সঙ্গে অনেকে ভর্তিও হতে আসবেন। স্ৱাভাবিক ভাবেই ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে কোভিড-বিধি মানার ব্যাপারে আমরা জোর দেব।“ মেমারির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কেশবচন্দ্র ঘোষালের দাবি, ভিড় এড়াতে অনেকগুলি কাউন্টার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ দিন গোল দাগ কাটার কাজ চলতে দেখা যায় বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে। সহকারী প্রধান শিক্ষক অরুণাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক বারে ৫০ জনের বেশি অভিভাবকের হাতে মার্কশিট দেওয়া হবে না।’’ আউশগ্রামের গেঁড়াই হাইস্কুলের শিক্ষক তপন দাসের দাবি, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া মারফত কখন, কী ভাবে মার্কশিট নিতে অভিভাবকদের আসতে হবে, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ বর্ধমানের কাছে কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনারের কথায়, “মিড-ডে মিল যে ভাবে বিলি করা হয়, সে পদ্ধতিতেই মার্কশিট বিলি করা হবে।’’ কাটোয়ার কেডিআই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কমলকান্তি দাসের আবার আশ্বাস, তাঁদের স্কুলে যা জায়গা রয়েছে, স্বাস্থ্য-বিধি মানা নিয়ে কোনও অসুবিধা হবে না।