ট্রেনে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রশাসনের কর্তারা। কাটোয়ায়। নিজস্ব চিত্র
পরিযায়ী শ্রমিকদের এলাকায় পৌঁছনোর সময়ে হেনস্থার অভিযোগ করলেন বাস চালকেরা। তাঁদের দাবি, শ্রমিকদের ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময়ে, তাঁদের অনেকে মাঝ রাস্তায় নিজেদের গ্রামের কাছে নামিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তা মানতে না চাইলে গোলমাল পাকাচ্ছেন। শনিবার সকালে কাটোয়া থেকে যাওয়া দু’টি বাসকে বীরভূমের বোলপুরের নিমতলা ও নানুরের পালিতপুর-রানিবাজারে আটকানো হয়, চালকদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কাটোয়ায় ফিরে বাসকর্মীরা মহকুমা প্রশাসন ও বিধায়কের কাছে অভিযোগ জানান।
কাটোয়া বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ট্রেনে এসে কাটোয়ায় নামার পরে, তাঁদের নিজের এলাকায় পৌঁছতে ৩৫টি বাস রাখা হয়েছে। দুই বর্ধমান ছাড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের কয়েকশো শ্রমিককে বাসে করে তাঁদের এলাকার ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ দু’টি বাস বোলপুর ও নানুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল।
বোলপুরগামী বাসের চালক শেখ বাবর আলির অভিযোগ, ‘‘প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বোলপুরের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে যেতে হবে। পথে কাউকে কোথাও নামানো যাবে না। কিন্তু বাস রওনা হওয়ার পর থেকেই কিছু শ্রমিক তাঁদের কথামতো জায়গায় নামিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তা মানতে না চাইলে ওঁরা বচসা জোড়েন। শেষে ফোন করে আত্মীয়-স্বজনদের খবর দেন।’’ তিনি অভিযোগ করেন, বাস বোলপুর নিমতলার কাছে পৌঁছতেই এক দল লোক রাস্তা আটকায়। কয়েকজন শ্রমিক বাস থেকে নেমে পড়েন। কিছু লোক বাসে ইট ছোড়ে। চালকের কথায়, ‘‘অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কোনও রকমে বাস ঘুরিয়ে কাটোয়ায় ফিরে আসি।’’
আর এক বাস চালক বাপি বসু অভিযোগ করেন, নানুরে যাওয়ার পথে শ্রমিকদের অনেকে ইচ্ছেমতো জায়গায় নামতে চাইছিলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় কয়েকজন তাঁকে মারধর শুরু করেন। সকাল ৭টা নাগাদ বাস পালিতপুর-রানিবাজারে পৌঁছলে কিছু লোক বাস আটকায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে গালিগালাজ করে। চড়-থাপ্পড়ও মারে। প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার সেখানে পৌঁছলে বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যায়। তার পরে কাটোয়ায় ফিরে আসি।’’
‘কাটোয়া বাস মালিক সমিতি’র সভাপতি নারায়ণচন্দ্র সেন দাবি করেন, ‘‘বাস চালকেরা করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা উপেক্ষা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের পৌঁছতে যাচ্ছেন। তার পরেও তাঁদের সঙ্গে এই রকম আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনকে জানিয়েছি, এমনটা চলতে থাকলে বাস চালানো সম্ভব নয়।’’
কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার জন্য এত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরেও এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’ মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘বাস চালকদের অভিযোগ শুনেছি। বীরভূমের পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা হবে।’’