‘মাস্ক’ কোথায়, প্রশ্ন পুলিশের। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
শেষমেশ কাল, শনিবার থেকে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের ৮৮ ও ৮৯—এই দু’টি ওয়ার্ডে সাত দিনের জন্য ‘লকডাউন’-এর সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “লকডাউন কার্যকর হওয়ার আগে, ওই দুই ওয়ার্ডের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করার আবেদন জানানো হচ্ছে।”
রানিগঞ্জের আলুগড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রানিগঞ্জে ফের আরও ১৫ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলে। এর মধ্যে ১২ জন পুর এলাকা এবং তিন জন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে বল্লভপুর পুলিশ আউটপোস্টের এক জন এএসআই-সহ দু’জন ও রানিগঞ্জ থানার এক মহিলা পুলিশকর্মীও রয়েছেন। এ পর্যন্ত পুর-এলাকায় ৩৭ জন এবং ১১ জন পঞ্চায়েত এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আক্রান্ত এক মহিলার বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি রানিগঞ্জ পুর-এলাকার ছ’জন তৃণমূল এবং পাঁচ জন সিপিএম কাউন্সিলর (এক জন অনুপস্থিত ছিলেন), বিডিও (রানিগঞ্জ) অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুর-কমিশনার খুরশিদ আলি কাদরিকে সঙ্গে নিয়ে ‘লকডাউন’ সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেন। মেয়র জানান, এ দিন সকালে পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিব্যেন্দু ভগত তাঁর কাছে চিঠি লিখে রানিগঞ্জ পুর-এলাকায় ‘লকডাউন’ ঘোষণার আবেদন জানান। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ওই দুই ওয়ার্ডে সাত দিন লকডাউনের জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয়। তাঁরা সেই প্রস্তাব জেলাশাসকের কাছে পাঠান। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘রানিগঞ্জের পুর-এলাকায় আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকের বাড়ি ওই দু’টি ওয়ার্ডে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
এ দিকে, মেয়র সর্বসম্মতিক্রমে শুধু দু’টি ওয়ার্ডে লকডাউনের কথা বললেও রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত ও মেয়রের ডাকা বৈঠকে যোগ দেওয়া সিপিএম কাউন্সিলর নারায়ণ বাউরি রানিগঞ্জ পুর-এলাকার সর্বত্র লকডাউনের পক্ষে বলে জানান। রুনুবাবু জানান, তিনি এ দিন জেলাশাসককে ই-মেল করে জানিয়েছেন, রানিগঞ্জ প্রাচীন ঘিঞ্জি শহর। কোথাও দূরত্ববিধি সে ভাবে নাগরিকেরা মানছেন না। প্রশাসন সর্বত্র জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছে না বলেও রুনুবাবুর অভিযোগ। নারায়ণবাবুও দাবি করেন, “আমরা চার জন কাউন্সিলর একই প্রস্তাব মেয়রের কাছে দিয়েছি। তা ছাড়া, অবস্থা সামলানো যাবে বলে মনে হয় না।’’
পাশাপাশি, আলুগড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ মনোজ শর্মাও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ই-মেল করে রানিগঞ্জ পুর-এলাকার সর্বত্র লকডাউন ঘোষণার আর্জি জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জেলাশাসক জানান, ওই আবেদনটিও বিবেচনা করা হচ্ছে। সিপিএম বিধায়কের অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলাশাসক অবশ্য দাবি করেন, ‘‘প্রশাসন যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘এই মুহূর্তে যেখানে লকডাউন হচ্ছে না, সেখানে ব্যাপক প্রচার-অভিযান চালাবে প্রশাসন। তবে বারবার বলতে চাই, নাগরিকেরা সচেতন না হলে শুধু লকডাউনে সমস্যা মেটা সম্ভব নয়।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (সেন্ট্রাল ২) তথাগত পাণ্ডে জানান, ৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৮২ জনের বিরুদ্ধে ‘মাস্ক’ না পরার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার চলছে।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে