এই পার্কিং নিয়েই বিতর্ক বেনাচিতিতে। নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি পার্কিংয়ের চাপে পুরসভার বৈধ পার্কিংয়ের ঠিকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি। তৃণমূলের একাংশের মদতেই ওই বেআইনি পার্কিং চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। দুর্গাপুরের বেনাচিতির জলখাবার গলি এলাকার এই ঘটনা ইতিমধ্যে খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, বহু বছর ধরেই জলখাবার গলির কাছে পুকুরপাড়ে ‘বাবা বটকেশ্বর পার্কিং’ নামে স্লিপ ছাপিয়ে অবৈধ পার্কিং চলছে। পার্কিং চালান সঞ্জয় মণ্ডল নামে এক জন। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। মোটরবাইক রাখার জন্য ১০ টাকা করে পার্কিং ফি নেওয়া হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পার্কিং চলে। বাজার করতে বা অন্য প্রয়োজনে বেনাচিতিতে আসা অনেকেই সেখানে বাইক রাখেন। ফলে, প্রায় দিনভর সেখানে বাইকের আসা-যাওয়া লেগে থাকে। পুরসভা সূত্রের খবর, এই পার্কিং থেকে কোনও রাজস্ব আসে না তাদের কাছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ এই পার্কিংয়ের জেরে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে থাকায় মাঝে মাঝেই যানজট হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা লেগেই থাকে। অবিলম্বে এই পার্কিং তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাজারে আসা মানুষজন।
পাশেই রয়েছে পুরসভার নিজস্ব পার্কিং। টেন্ডারের মাধ্যমে বছর তিনেক আগে সেই পার্কিং পরিচালনার দায়িত্ব পান তৃণমূলের দুর্গাপুর ২ নম্বর ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি বিপ্লব বিশ্বাস। অবৈধ পার্কিংয়ের ঠেলায় নাভিশ্বাস দশা, এমনই অভিযোগ তাঁর। তিনি বলেন, “পুরসভা পার্কিংয়ের জন্য টেন্ডার ডেকেছিল। আমরা নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে পার্কিং পরিচালনার দায়িত্ব পাই। অথচ, পাশেই সরকারি জায়গায় রমরম করে চলছে একটি অবৈধ পার্কিং। বারণ করলে হুমকি দেওয়া হয়। পুরসভাকে সব জানিয়েছি। ফল কিছু হয়নি।” তাঁর দাবি, অবৈধ পার্কিংয়ের জেরে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা। তা ছাড়া, যানজট হচ্ছে এলাকায়। তৃণমূলের একাংশের মদতেই বেআইনি পার্কিং চলছে, এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তা আমি বলতে পারব না। তবে প্রভাবশালী কেউ নিশ্চয় আছেন। তা না হলে দিনের পর দিন বেআইনি ভাবে পার্কিং চালানোর ক্ষমতা আসে কী করে?’’ তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অবৈধ পার্কিং নিয়ে সরব হলেও, এখানে তার কোনও প্রভাব এখনও দেখছি না। তোলা নেওয়ার মতো করে বেআইনি পার্কিং চলছে।”
যদিও সঞ্জয়ের দাবি, যখন এই পার্কিং শুরু হয়েছিল, তখন এলাকা এত জনবহুল ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘পার্কিং করে অল্পস্বল্প যা হয়, তাই দিয়েই সংসার চলে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে পুরসভা তুলে দিলে বিপদে পড়ব। এমন কিছু করা হোক, যাতে পুরসভার আয় হয়, আমারও সংসার চলে।’’
বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের মদতে সারা শহর জুড়ে জবরদখল, অবৈধ পার্কিং-সহ নানা বেআইনি কাজকর্ম চলছে। বেনাচিতিতেও একই পরিস্থিতি। দলেরই নেতা তথা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সেই অভিযোগ করছেন প্রকাশ্যে।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দলের নাম করে কেউ বেআইনি কাজ করলে দল তাঁকে ছাড় দেয় না।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে সঞ্জয়কে পুরসভায় দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুর-প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে জবরদখল, অবৈধ পার্কিং-সহ সরকারি জমি দখল করে যে কোনও কাজ অবশ্যই বন্ধ করা হবে।’’