নদীতে ডুবে মৃত্যু। প্রতীকী চিত্র।
নদীতে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে প্রায়ই। নানা দুষ্কর্ম রুখতে নদীতে টহলদারিরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় নৌকা বা বিপর্যয়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য গাড়িই নেই কালনায়। অভিযোগ, এই ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য যাঁরা প্রশিক্ষিত তাঁদের খুঁজতেও বহু সময় চলে যায়। অভাব রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতিরও। সব মিলিয়ে কালনা মহকুমায় বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকাঠামো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি, দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি কালনা শহরের মিলিটারি ঘাটে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায় তেরো বছরের এক কিশোর। প্রশাসনের কাছে খবর যায়। তবে গাড়ি করে নৌকা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডুবুরি-সহ প্রায় ১২ জনের দলটি যখন ঘাটে পৌঁছয় ততক্ষণে কেটে গিয়েছে ঘণ্টা দুয়েক। এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়। কালনা পূর্বস্থলী ১, পূর্বস্থলী ২ ব্লকেরও অজস্র গ্রাম রয়েছে ভাগীরথীর ঘাটের আশপাশে। স্নান, পারাপারের মতো নানা কারণে নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঝড়ে এসটিকেকে রোডে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখনও খোঁজ পড়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদের। অভিযোগ, বেশির ভাগ সময়েই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নিয়ে হাজির হতে দেরি হয় তাঁদের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলা দলের সদস্যদের পরিচালনা করার জন্য মহকুমা পর্যায়ে সরকারি আধিকারিক রয়েছেন। তবে যাঁরা দুর্যোগে মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করবেন তাঁরা ‘ছন্নছাড়া’। ডুবুরি হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ে কাজ না মেলায় তাঁদের কেউ চাষবাস, কেউ টোটো বা বাস চালানোর কাজ করেন। জানা গিয়েছে, এক সময় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদের মহকুমাশাসকের কার্যালয়, ফেরিঘাট-সহ নানা জায়গায় কাজ দেওয়া হত। দুর্ঘটনা ঘটলে ডাক পড়ত তাঁদের। কিন্তু তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও কার্যালয় নেই। ফলে কিছু ঘটলে টেলিফোনে খবর পেয়ে নানা জায়গা থেকে এক জায়গায় জড়ো হতে বেশ খানিকটা সময় চলে যায়। আবরা জলপথে দেহ খোঁজার জন্য নৌকাও মেলে না সবসময়। যেমন, গঙ্গাসাগরে মেলার সময় কালনা মহকুমার নৌকাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর ফেরেনি সেটি। ফলে বিপর্যয় ঘটলে জেলা থেকে কখন নৌকা আসবে, তার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না। নেই কোনও কন্ট্রোল রুমও। মহকুমার বিপর্যয় মোকাবিলা দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘নিয়মিত কাজ না মেলায় আমাদের অন্য কাজ করতে হয়। কিছু যন্ত্র রয়েছে ঠিকই, তবে আরও সরঞ্জামের প্রয়োজন রয়েছে।’’
পরিকাঠামোর অভাবের কথা স্বীকার করেছেন মহকুমাশাসক সুরেশ কুমার জগৎ। তিনি বলেন, ‘‘নৌকা, গাড়ি, আধুনিক যন্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে। জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।