পাশে আবর্জনা, বর্ধমানে বেহাল রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা দখল, উপচে পড়া জঞ্জাল, অপরিষ্কার নর্দমা, ভাঙাচোরা রাস্তা— পুর পরিষেবার পুরোভাগে জুড়ে এ সবই, দাবি করেছেন বর্ধমানে বাসিন্দারা। সোমবার রাজ্যের একাধিক পুরসভার হাল নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের পুরসভাগুলি নিয়ে আলাদা করে তিনি কিছু না বললেও দৈনন্দিনের বাস্তবটা যে বেহাল, তা ভালই টের পান শহরবাসী। চলতে গেলে হোঁচট, ধুলো আর আবর্জনা স্তুপের গন্ধে করোনা-পর্ব পার করেও নাকে-মুখে মাস্ক বা রুমাল ছাড়তে পারেননি অনেকেই।
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, শহর জুড়ে ধুলো আর অপরিচ্ছন্নতার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন অনেকেই। বিশেষ করে বয়স্ক আর শিশুদের মধ্যে এর প্রভাব বাড়ছে। বর্ধমানের বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক অশোক দত্ত বলেন, “দূষণের জন্য শিশুরাও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। গরমে ভাইরাস-জনিত কারণে শিশুদের মধ্যে ঠান্ডা লাগা, শ্বাসকষ্টে ভোগার প্রবণতা থাকে। দূষণের কারণে সেটা আরও চেপে বসছে।” বর্ধমান মেডিক্যালের বক্ষ-বিশেষজ্ঞ তারাশঙ্কর মালিক বলেন, “শহরে বাস, গাড়ি, কল কারখানার দূষণ থাকে। তার সঙ্গে রাস্তার ধুলো যোগ হচ্ছে। এ সবই ফুসফুসকে প্রভাবিত করে।” আর এক চিকিৎসক অর্ণব মাজির দাবি, “শহরের দূষণের জন্য বয়স্ক ও মহিলাদের মধ্যে অনেকেই ফুসফুসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।”
লোকসভা ভোটের আগে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ শহরের পুর পরিষেবার হাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তৃণমূলের একাংশও মেনে নেন, শহরের একাধিক ওয়ার্ড হারার পিছনে পুর পরিষেবা একটা বড় কারণ। বর্ধমান শহরে ২০১৯ সাল থেকে ‘বড় ভোট’গুলিতে ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলে তৃণমূল বরাবর পিছিয়ে রয়েছে। মাঝে পুরভোটে ৩৫টি ওয়ার্ডেই জিতেছ তৃণমূল। তবে এ বার লোকসভা ভোটের হিসাবে বর্ধমান শহরে তৃণমূল মাত্র ১৫টি ওয়ার্ডে জিতেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, ২০১৯ সালের পর থেকে শহরের বেশির ভাগ রাস্তায় ভাঙাচোরা। মাঝেমধ্যে তাপ্পি পরলেও তা টেঁকে না। বেশ কিছু রাস্তায় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাথর ছিটকে দোকানে ঢুকে পড়ছে। বিশেষত আলমগঞ্জ রোড, বংপুর মোড়, তেজগঞ্জ, বাবুরবাগ, ইছলাবাদ, নীলপুরের মতো এলাকায় সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। জলের পাইপ লাইন বসাতে গিয়ে জনবহুল এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা বেহাল হয়ে গিয়েছে। এক পুর-সদস্যর খেদ, “স্রেফ রাস্তার জন্য ওয়ার্ডে হেরে গেলাম!”
নর্দমার জল উপচে পড়া, ভ্যাট পরিষ্কারের কোনও নির্দিষ্ট সময় না থাকা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড-সহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহ হয় না বলে অভিযোগ। হলেও দু’একটি ওয়ার্ড বাদে পচনশীল-অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করা হয় না। শহরে ঢোকার মুখে উল্লাস মোড়, পুলিশ লাইনে রাস্তার দু’পাশে আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাস্তায় নিয়মিত আলো না জ্বলারও অভিযোগ রয়েছে। আবার দিনের বেলায় আলো জ্বলে রয়েছে, এমনও দেখা যায়। অনেক জায়গায় পানীয় জলেরও অভাব রয়েছে।
শহরের আর একটি রোগ ফুটপাথ ‘দখল’। শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া পুরনো জিটি চওড়া হওয়ার পরেই ফুটপাথ ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে। শাসক দল বা শাখা সংগঠনগুলির নামে ফুটপাথ দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। হাসপাতাল, রাজ কলেজের সামনেও দখলদারি বাড়ছে। ট্যাক্সি সংগঠনগুলি রাস্তা দখল করে অফিস ঘর খুলেছে বলে অভিযোগ সেখানে। বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাস বলেন, “শহরের ১৫টি রাস্তা আধুনিকীকরণ হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো প্রতিটি ওয়ার্ডে বৈঠক করে সমস্যাগুলি জেনে সমাধান করা হবে। রাস্তা দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।”
মঙ্গলবার দিনভর পুর-সদস্য থেকে বিভাগীয় দফতরের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশ সরকার। তিনি বলেন, “আলোচনা হয়েছে। কোথায়, কী সমস্যা রয়েছে জেনেছি। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। শহর পরিষ্কার রাখার কাজ শুরু হয়েছে।”