ধৃত জন্মেজয় খাঁ। নিজস্ব চিত্র
ব্র্যান্ডের নাম নকল করে সুগন্ধি চাল রফতানি ও বিক্রির অভিযোগে খণ্ডঘোষের এক চালকল মালিককে গ্রেফতার করল কেরল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চালের প্যাকেটে থাকা পদ্মের ছবি ও সংস্থার নাম সামান্য রদবদল করে বেআইনি ব্যবসা চলছিল। সম্প্রতি রায়নার আহ্লাদিপুরের ‘বর্ধমান অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট’ চালকল সংস্থার তরফে কেরলের কোঝিকোড় সিটি থানা কপিরাইট-সংক্রান্ত একটি মামলা করা হয়। তার ভিত্তিতেই রবিবার সকালে সিনিয়র ইনস্পেক্টর এ উমেশের নেতৃত্ব কেরল থেকে এক দল পুলিশ এসে জন্মেজয় খাঁ নামে ওই ব্যক্তিকে ধরে। আদালতে তোলা হলে চার দিনের ট্রানজ়িট রিমান্ডে পাঠান বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার ‘রোজ ব্র্যান্ডে’র চালের ভাল চাহিদা রয়েছে কেরলে। ওই চালকলের মার্কেটিং ম্যানেজার, কেরলের কান্নুরের বাসিন্দা শ্রীপতি ভট গত ৩১ মে অভিযোগ করেন, তাঁদের ব্র্যান্ড নকল করে বিভিন্ন এলাকায় চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এতে তাঁদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। চালের প্যাকেটে একটি পদ্মের জায়গায় তিনটি পদ্ম ও সংস্থার নামের মাঝে ‘জে এম’ অক্ষর জুড়ে চাল বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশ তদন্তে নেমে চারটি নকল প্যাকেট পায়। যে দোকান ও হোটেল থেকে ওই প্যাকেট পাওয়া গিয়েছিল, তাদের বিলে খণ্ডঘোষের ওই চালকলের নাম ছিল, দাবি পুলিশের। কেরল পুলিশ জানায়, নকল প্যাকেটে রায়নার আহ্লাদীপুরের চালকলের ঠিকানা ছিল। তবে ওই ঠিকানায় গিয়ে কোনও চালকলের খোঁজ মেলেনি। অভিযোগকারীর আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস ও অনুপ দাসেরা আদালতে দাবি করেন, “রায়নার সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত থেকে কেরলের পুলিশের হাতে শংসাপত্র দিয়ে জানিয়ে দেয়, এলাকায় ওই নামে কোনও চালকল নেই।’’ ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা বস্তা ও চালের ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে তাঁরা নিশ্চিত হন, ‘কপিরাইট’ নিয়ম লঙ্ঘন করে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। অভিযোগকারী শ্রীপতি ভট্ট বলেন, “কত বছর ধরে আমাদের সংস্থার নাম করে চাল বিক্রি করছে জানা নেই। ওই চাল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় কে নিত? সে জন্যই আমরা অভিযোগ জানিয়েছি।”
এর আগেও রায়নার আর এক সুগন্ধি চাল সরবরাহকারী শেখ সাইফুল রহমান গত ১৭ এপ্রিল কোঝিকোড় (গ্রামীণ) জেলার ওয়াটাকাভা থানায় অভিযোগ করে জানান, তাঁদের ‘ব্র্যান্ড’ ব্যবহার করে কেরলের একাধিক জায়গায় নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। পুলিশ একটি গুদামে হানা দিয়ে ৫০ কিলোগ্রাম ওজনের ৭২ বস্তা চাল বাজেয়াপ্ত করে। তদন্তে বেশ কয়েকজনের নামও উঠে আসে। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। আড়াই মাসের ব্যবধানে ফের এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন ‘বর্ধমান গোবিন্দভোগ মিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘বর্ধমান জেলা চালকল সমিতি’।
তাঁরা জানান, শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতেই ৭০০ কোটি টাকার বেশি চাল রফতানি হয় রায়না-খণ্ডঘোষের প্রায় ৪০টি চালকল থেকে। নকল চাল বিক্রি হলে সুগন্ধি চালের বাজারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানা গিয়েছে, ১৪-১৫টি চালকল সংস্থা প্যাকেটে গোলাপের ছবি দিয়ে দক্ষিণ ভারতে চাল রফতানি করে। প্রত্যেকেরই রেজিস্টার্ড নম্বর রয়েছে। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ রেখে লাভ কি? কোনও সমস্যা হলে অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। না হলে ব্যবসার ক্ষতি হবে।’’