কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকে দেশের নানা প্রান্তে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কবির রচনাবলির হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই কাজটি হবে। অনুবাদ কাজে সহযোগিতা করবে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ)।— এমনটাই জানিয়েছেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
নজরুলের যাবতীয় সাহিত্যকর্ম, ব্যবহৃত সামগ্রী দেশের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল স্টাডি সেন্টারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কবির রচনাবলির হিন্দি অনুবাদ প্রসঙ্গে উপাচার্য দেবাশিস বলেন, “বিএইচইউ-র অধীনস্থ প্রেমচন্দ সাহিত্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজটি হবে। প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” হিন্দিতে নজরুল-রচনাবলির প্রকাশ করবে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। অনুবাদের কাজটি করবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও প্রেমচন্দ সাহিত্য সংস্থার প্রতিনিধিরা।
কেন এই উদ্যোগ? উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংযোজন: আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে নজরুল-সাহিত্যের কিছু অংশের হিন্দি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখন তাঁরা চাইছেন, নজরুল-সাহিত্যের সামগ্রিক হিন্দি অনুবাদ। উপাচার্য বলেন, “এর ফলে, দেশ জুড়ে আরও বেশি করে নজরুল-সাহিত্যের কথা ছড়িয়ে পড়বে। উপকৃত হবেন অন্য ভাষার গবেষকেরাও।”
ঘটনা হল, খোদ নজরুল সাহিত্যের অনুবাদকে যে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, তা টের পাওয়া যায় তাঁর অনুবাদকর্মগুলির মধ্যে। নজরুলকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ওমর খৈয়াম, জালালউদ্দিন রুমি ও শামসুদ্দিন মুহম্মদ হাফিজ। তাঁদের বেশ কিছু সৃষ্টির অনুবাদ করেছিলেন নজরুল, এখনও যা বাংলা সাহিত্যের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সেগুলির মধ্যে ‘রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম’ বইটির কথা বিশেষ ভাবে বলে থাকেন গবেষকেরা।
সেই নজরুলের রচনাবলি হিন্দিতে প্রকাশের উদ্যোগের সলতে পাকানোটা শুরু হয়েছিল একটি সাহিত্য সম্মেলনে। সম্প্রতি আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইসিএল সম্মেলনটির আয়োজন করে। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন বিএইচইউ-এর সাহিত্য বিভাগের শিক্ষকেরা ও দেবাশিস। সেখানেই বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আংশিক ভাবে হলেও, আগামী বছরের মধ্যে নজরুলের অন্তত কিছু বইয়ের হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে।
এই উদ্যোগে খুশি সকলেই। নজরুল স্টাডি সেন্টারের নজরুল স্টাডি সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটি খুবই ভাল একটি উদ্যোগ এবং সময়োপযোগী।” সেন্টারটির প্রাক্তন কর্ণধার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, এই উদ্যোগের ফলে সকলেই উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, কবির ভ্রাতুষ্পুত্র রেজাউল করিম জানান, ২০১৫-য় চুরুলিয়া নজরুল অ্যাকাডেমির উদ্যোগে ‘অগ্নিবীণা’র হিন্দি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। রেজাউল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সামগ্রিক রচনাবলির হিন্দি অনুবাদ করা সম্ভব। তাঁরা তা গ্রহণ করায় আমরা খুশি।”