দেহ সংরক্ষণের বাক্স দান। —নিজস্ব চিত্র।
চার মাস আগে নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। ছেলের দেহ কয়েক ঘণ্টার জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হিমশিম হতে হয়েছিল তাঁকে। তাই ছেলের জমানো টাকা দিয়েই এলাকার মানুষের জন্য মৃতদেহ সংরক্ষণকারী ঠান্ডা বাক্স কিনলেন কাটোয়ার ফল ব্যবসায়ী মহম্মদ আফতার হোসেন। ছেলের স্মৃতিতে বিনামূল্যে ওই বাক্স ব্যবহারের জন্য দেবেন বলে জানান তিনি। তাতে অনেকেই উপকৃত হবেন বলে আশাবাদী তাঁর পরিবার। বৃহস্পতিবার কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দেহ সংরক্ষনকারী বাক্সের পরিষেবার
সূচনা করেন।
আফতার হোসেন জানান, অনেকেই প্রিয়জনের দেহ কয়েক ঘণ্টা বাড়িতে রাখতে চান, যাতে দূরে থাকা আত্মীয়স্বজনেরাও শেষ দেখা দেখতে পান। আবার অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে মারা যান। তাঁদের দেহ আনার পরে কয়েক ঘণ্টা রাখতে চান পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এ বার এই বাক্সের সাহায্যে আশপাশের এলাকার মানুষজন প্রয়োজনে তা করতে পারবেন বলে মনে করছেন তিনি।
কাটোয়া শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আফতার ও রেহেনা বেগমের বড় ছেলে মহন্মদ আফরাজ হোসেন ২৪ বছর বয়সে অগ্নাশয়ের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গত ৪ জুন। আফরাজের চিকিৎসার জন্য হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ছেলের দেহ কাটোয়ায় নিয়ে আসেন আফতার। এক দিন বাড়িতে রাখার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে দেহ সংরক্ষণকারী বাতানুকূল বাক্সের। কিন্তু কাটোয়ায় ওই বাক্স তিনি পাননি। বর্ধমান থেকে তেমন বাক্স নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়তে হয়, জানান তিনি। তাঁর কথায়, “আমি তখনই ঠিক করেছিলাম,
ওই বাক্স এনে সবাইকে বিনামূল্যে পরিষেবা দেব। তার পরে হায়দরাবাদ থেকেই ওই বাক্স নিয়ে এসেছি। যাঁর প্রয়োজন হবে, কাটোয়া আরএমসি মার্কেটে আমার কাছ থেকে নিয়ে
যেতে পারবেন।’’
বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘দেহ হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সৎকার করাই ভাল। তবে প্রয়োজনে ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে এক বার ব্যবহারের পরে এই ধরনের বাক্স উপযুক্ত ভাবে জীবাণুমুক্ত
করতে হবে।’’