আঁচলের ছায়ায়। কালনায়। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে চাঁদি ফাটা রোদ। অন্য দিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়। জোড়া ফলায় নাস্তানাবুদ হয়ে উঠছেন কাটোয়া, কালনার বাসিন্দারা।
কাটোয়াবাসীর অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কোনও কোনও এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় লো ভোল্টেজ থাকছে। আবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় লোডশেডিং চলছে। তীব্র গরমে দিন দশেক ধরে এমন চলায় জেরবার হয়ে উঠেছেন শহরবাসী। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাকে বিঁধে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের দাবি, চাহিদা যতখানি ততটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সেই কারণেই এই সমস্যা। একই হাল কালনাতেও। বাতানুকুল যন্ত্র বিক্রেতাদের দাবি, প্রচুর বিক্রি বেড়েছে। কেনার পরে তা বাড়িতে বসাতেও চার-পাঁচ লেগে যাচ্ছে। চারটি দল টানা ঘুরে ঘুরে ওই কাজ করছে। বেড়েছে বড় স্ট্যান্ড ফ্যানের বিক্রিও।
বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, মাসখানেক ধরে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু ততটা সরবরাহ না থাকায় কোথাও কেবল ফল্ট হচ্ছে, কোথাও ফিউজ় উড়ে লোডশেডিং হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ট্রান্সফর্মার না থাকায় সমস্যা বাড়ছে। কাটোয়ার বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের দাবি, সমস্যা মেটাতে গেলে নতুন করে ট্রান্সফর্মার বসানো ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু, জায়গার অভাবে তা বসানো যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়ি বা দোকানের সামনে জায়গা দিচ্ছেন না। কাটোয়া বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ২০টি ওয়ার্ডে প্রায় এক লক্ষ মানুষ বাস করেন। পথবাতি থেকে শুরু করে অফিস, আদালত, বাড়ি-বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই মুহূর্তে ৬৩ কিলোভোল্ট ও ১০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ২১৬টি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। বর্ধিত চাহিদা মেটাতে আরও ৪০টি ১০০ কেভির ট্রান্সফর্মার দরকার। তা না থাকার জন্য্য সমস্যা হচ্ছে।
কাটোয়া কলেজপাড়ার বাসিন্দা সত্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ির বয়স্কদের একটু আরাম দিতে বিদ্যুৎ দফতরে কথা বলে ধারদেনা করে বাতানুকুল যন্ত্র বসিয়েছি। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে টানা লো-ভোল্টেজ চলছে। গত তিন দিন ধরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ থাকছে না। বাতানুকূল যন্ত্র তো দূর, হাওয়ায় জুটছে না। বিদ্যুৎ দফতরের সক্রিয় হওয়া উচিত।’’ পানুহাটের বাসিন্দা মঙ্গল সাহাও বলেন, “বিল দিতে এক দিন দেরি হলে জরিমানা নেওয়া হয়। কোনও সময় লাইন কাটতে লোক চলে আসেন। তাহলে টাকা দিয়েও কেন বিদ্যুতের সমস্যায় ভুগব? একজোট হয়ে পথে নামা উচিত।’’ কালনা শহর লাগোয়া হাটকালনা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তন্ময় দাস বলেন, ‘‘গরমের হাত থেকে বাঁচতে দু’টি ঘরে এসি কিনেছি। কিন্তু ভোল্টেজ এত কমে গিয়েছে যে স্টেবিলাইজ়ার দিয়েও চালানো যাচ্ছে না। ফ্যানও ঘুরছে ধীরে।’’ আর এক বাসিন্দা কল্পনা প্রামানিকের কথায়, ‘‘বাড়িতে দুটো ফ্যান রয়েছে। তাতে গরম কাটছে না বলে দু’টো স্ট্যান্ড ফ্যানও কেনা হয়েছে। কিন্তু ভোল্টেজ ঠিকঠাক না থাকায় রাতে খুবই ধীরে ফ্যান চলছে।’’
বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ১০টা থেকে ভোর ৩টে পর্যন্ত বিদ্যুতের খরচ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এতে লোডশেডিং বাড়ছে, যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা যাচ্ছে। তাঁদের দাবি, শহরের বিভিন্ন ত্রুটি মেরামতির জন্য ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা মিললেও গ্রামাঞ্চলে রাত ১০টার পরে গাড়ি পৌঁছয় না।ফলে পরিষেবার জন্য অপেক্ষা করতে হয় পরের দিন সকাল পর্যন্ত। বিদ্যুৎ দফতরের কালনা ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিম ফিরোজ মণ্ডল জানিয়েছেন, মার্চ, এপ্রিল মাসে মহকুমায় ৪৫০টি বাতানুকুল যন্ত্রের লোড বাড়ানোর আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে কালনা শহরেই দু’শোটি। মে মাস ধরলে অনায়াসে সাতশো ছাড়াবে ওই সংখ্যা। এর বাইরে বিদ্যুৎ দফতরের অনুমতি নেন না এমনও অনেকেও রয়েছেন, দাবি তাঁদের।
কাটোয়া বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে ট্রান্সফর্মার বসাতে পারছি না। সেই কারণে বিপর্যয় হচ্ছে। সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে।’’ কালনার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘কোন কোন জায়গায় কখন লোডশেডিং হবে সেই বিষয়টি দেখে এরিয়া লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার। তবে শহর গ্রামে কোথায় কতটা বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে আমরা তার হিসাব রাখছি। যাতে চাহিদার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেখানে পরিকাঠামো বাড়ানো যায়।’’