বেগম বিবি। নিজস্ব চিত্র
তিনি জীবিত। বিধবা ভাতাও পেতেন নিয়মিত। অথচ, পঞ্চায়েত তাঁকে মৃত বলে শংসাপত্র পাঠিয়েছে ব্লক প্রশাসনকে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভাতা। ফের ওই সুবিধা পেতে সশরীরে প্রশাসনের কাছে হাজির হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মুকশিমপাড়া পঞ্চায়েতের কুবাজপুর গ্রামের বেগম বিবি। বিডিও-র হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। চিঠি পেয়ে বিষয়টি নিয়ে নড়ে বসেছে ব্লক প্রশাসনও।
আধার কার্ড অনুযায়ী, ওই বৃদ্ধার বয়স ৭২। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ ছেলেমেয়ের কাছে পালা করে থাকেন গরিব মহিলা। ওষুধ-সহ নানা প্রয়োজন মেটাতে তাঁর ভরসা বিধবা ভাতার ওই টাকা। পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রায় দশ মাস ধরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভাতার টাকা ঢুকছে না। কয়েকবার ব্যাঙ্কের পাসবই পরীক্ষা করে দেখার পরে, পরিবারের তরফে বিষয়টি জানানো হয় মুকশিমপাড়া পঞ্চায়েতকে।
বৃদ্ধার এক ছেলে খায়রুল শেখ জানান, তাঁদের বাবা মারা গিয়েছেন ১২ বছর আগে। মা বছর পাঁচেক ধরে ওই ভাতা পান। প্রথমে ডাকঘর, পরে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে টাকা আসত। কিন্তু কয়েকমাস ধরে টাকা আসছে না। ব্যাঙ্কও কিছু বলতে না পারায় পঞ্চায়েতে যান তাঁরা। সেখানেও কিছু জানতে না পারায় যোগাযোগ করেন ব্লক কার্যালয়ে। তাঁর দাবি, ‘‘ওখানে গেলে আমাদের বলা হয়, মা মারা গিয়েছেন। অথচ, মা সুস্থ আছেন। জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করা হল কী ভাবে জানি না। আমরা স্তম্ভিত।’’
বিডিওকে লেখা চিঠিতে বেগম বিবি জানিয়েছেন, ব্লক থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে তাঁর ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ চাওয়া হয়। কিন্তু পঞ্চায়েতের তরফে তাঁকে মৃত বলে শংসাপত্র দেওয়া হয়। তার জেরেই বন্ধ হয়ে যায় ভাতা। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘এই বয়সে কাজ করার ক্ষমতা নেই। সরকারি ভাতার টাকাটা অনেক কাজে লাগে। আমি বেঁচে থাকা সত্ত্বেও মৃত বলে কেন জানানো হল, বুঝতে পারছি না।’’ নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে বুধবার এক ছেলের সঙ্গে বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখাও করেন তিনি।
কেন এমন হল? মুকশিমপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান প্রতিমা দাসের দাবি, ‘‘যিনি ভাতা পাচ্ছিলেন তাঁর সঙ্গে কুবাজপুরের বেগম বিবির বয়স এবং বাবার নামের মিল নেই। ভুল এন্ট্রিতে উনি এত দিন ভাতা পেয়েছেন।’’ পঞ্চায়েতের এক কর্মীর কথায়, ‘‘যে বেগম বিবি ভাতা পাচ্ছিলেন তাঁর বয়স ৭১। তবে সরকারি নথিতে ওই নামে ভাতা প্রাপকের বয়স ৯৩। অথচ, অ্যাকাউন্ট নম্বর একই রয়েছে। আমাদের দৃঢ় ধারণা অন্য এক জন বেগম বিবি ছিলেন, যিনি আগেই মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্র জোগাড়ের চেষ্টা চলছে।’’ তবে এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য এ দিন পর্যন্ত ওই নামে অন্য কোনও মহিলার খোঁজ দিতে পারেননি। এমন কেউ মারা গিয়েছেন, কি না তা-ও জানাতে পারেননি।
পূর্বস্থলী ২-এর বিডিও সৌমিক বাগচি বলেন, ‘‘কেন এমন ঘটল তা নিয়ে আলোচনা করছি। পঞ্চায়েতকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে।’’