গণপিটুনিতে ধরা পড়েনি ছয় অভিযুক্ত

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত সমন পাঠিয়েছে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির এক কর্তাকে। মঙ্গলবার তাঁর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা। তিনিই এই মামলায় শেষ সাক্ষী বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৯
Share:

ঘটনাস্থল: এই এলাকাতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন পাঁচ জন। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পরে দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সাক্ষ্যদান পর্ব এখনও শেষ হয়নি। কালনার বারুইপাড়ায় গণপিটুনিতে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন এলাকায় নানা কাজে আসা মানুষজন থেকে শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই। গুজবের জেরে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে দিকে প্রশাসনের কড়া নজর রাখা প্রয়োজন বলেও তাঁদের দাবি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত সমন পাঠিয়েছে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির এক কর্তাকে। মঙ্গলবার তাঁর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা। তিনিই এই মামলায় শেষ সাক্ষী বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ওই ঘটনার আগে কিছু দিন ধরেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে এলাকায় ছেলেধরা ঘোরাফেরা করার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছরই শীতের সময়ে নদিয়া ও হুগলি থেকে কালনার নানা ফলের বাগানে কীটনাশক স্প্রে করতে আসেন কিছু মানুষজন। সে দিন নদিয়ার হাবিবপুরের পাঁচ জনের একটি দল সেই কাজে এসেছিল বারুইপাড়া এলাকায়। তাঁদের সঙ্গে ছোট-ছোট ব্যাগে কীটনাশকের বোতল ছিল। আচমকা তাঁদের দেখে কয়েকজন ছেলেধরা সন্দেহে চেঁচামেচি শুরু করে। তাঁরা বারবার নিজেদের পরিচয় জানালেও কাজ হয়নি। উল্টে, পাঁচ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

Advertisement

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নারায়ণচন্দ্র দাস ও মানিক সরকার নামে দু’জনের মৃত্যু হয়। বেনজন বিশ্বাস, মধুমঙ্গল তরফদার ও মানিক দাস নামে তিন জন অনেক দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হন। এক নিহতের পরিবারের তরফে কালনা থানায় ৯ জনের নামে একটি অভিযোগ করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োর সাহায্য নিয়ে পুলিশ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করে। তদন্তকারী অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হন কালনা থানার এসআই হাসান পারভেজ। পুলিশ ঘটনার ৯০ দিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়। তাতে এক নাবালক-সহ ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। যার মধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করে ২০ জনকে। ছ’জন এখনও অধরা। তারা পলাতক বলে জানিয়েছে পুুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ৮ জন জামিনে মুক্ত রয়েছে। বাকিরা জেল-হাজতে থাকাকালীনই বিচার পক্রিয়া চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত তিন জন টিআই প্যারেডে পাঁচ জনকে শনাক্ত করেন। আহতেরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দিও দেন। চার্জশিটে পুলিশ মামলায় ৪৮ জনকে সাক্ষী করে। তবে সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, মৃতদের আত্মীয়-সহ আরও সাত জনকে সাক্ষী হিসাবে চেয়ে কালনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপনকুমার মণ্ডলের কাছে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে।

কালনার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের হাতে আসা ঘটনার ভিডিয়ো, রক্তমাখা জামা-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্র সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছিলাম। মঙ্গলবার ওই দফতরের এক আধিকারিক আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।’’ আইনজীবী বিকাশবাবু বলেন, ‘‘ওই আধিকারিকই এই মামলার শেষ সাক্ষী। আশা করছি, মামলার দ্রুত রায় ঘোষণা হবে।’’

কালনায় নানা বাগানে ওষুধ দিতে আসেন হুগলির বাসিন্দা প্রণব দাস। তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠি!’’ কালনা শহরের বাসিন্দা বলাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তখন শুধু ছেলেধরা নয়, নানা রকম গুজব ছড়িয়েছিল। স্রেফ সেই কারণে অনেক জায়গায় প্রহৃত হন বহিরাগতেরা। বারুইপাড়ার ঘটনার পরেও তেমনটা ঘটেছে। এমন যেন আর না ঘটে, সে দিকে প্রশাসনের কড়া নজর রাখা প্রয়োজন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement