আসানসোলে পরিদর্শনে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
আলাদা জেলা ঘোষণার আগে জেলা আদালতের পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলতে হবে। আসানসোলে সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফে টাকা না মেলার অভিযোগে কয়েক দিন ধরে কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। সোমবার নির্মীয়মাণ এই আদালত পরিদর্শনে এসে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শীঘ্র পাওনা মেটানো হবে বলে ঠিকাদারকে আশ্বাস দেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। দুর্গাপুর আদালতে গিয়ে সেখানকার একতলা অপরিসর ভবনটি দেখেও অসন্তুষ্ট হন বিচারপতি।
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নতুন বছরের গোড়াতেই আসানসোল-দুর্গাপুরকে আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণার ইচ্ছে রয়েছে রাজ্যের। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী নতুন জেলা ঘোষণার আগেই জেলা আদালতের সম্পূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। সেই কাজ ঠিক কী পর্যায়ে রয়েছে, এ দিন তা খতিয়ে দেখতে আসানসোলে আসেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্মীয়মাণ জেলা আদালত ভবন, বিচারকদের আবাসন-সহ আদালতের নতুন-পুরনো সব পরিকাঠামোই ঘুরে দেখেন বিচারপতি। পরিদর্শনের সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্য বিচারপতিরা ও আইনমন্ত্রী মলয়বাবু। পরে তাঁরা সিবিআই আদালত চত্বরে বৈঠকে বসেন। প্রায় আধ ঘণ্টা বৈঠকের পরে ফের এক দফা পরিদর্শনে যান। সেই সময়ে বিচারপতি পরিকাঠামোর উন্নয়নে নানা প্রস্তাব দেন। তার মধ্যে রয়েছে বিচারকদের আবাসন লাগোয়া রাস্তা সংস্কার, নিকাশির ব্যবস্থা ও নতুন আবাসনের চার পাশে পাঁচিল তোলা।
এই আদালত ভবন তৈরির জন্য ১১ কোটি টাকার দরপত্র ডেকে বরাত পেয়েছেন সুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়। পরিদর্শনের সময়েই বিচারপতি জানতে পারেন, নির্মীয়মাণ ভবনের কাজ কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ভবণ নির্মাণে নিযুক্ত ঠিকাদারকে ডেকে পাঠালে তিনি এসে জানান, কাজের খরচ বাবদ তাঁর কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ঠিকাদারকে দ্রুত পাওনা মেটানোর আশ্বাস দেন।
ঠিকাদার বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে পেয়েছি মাত্র ২২ লক্ষ টাকা। আমার টাকা শেষ। ব্যাঙ্কও আর ঋণ দিচ্ছে না। তাই কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ মলয়বাবুর আশ্বাস, ঠিকাদারের টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি টাকা পেয়ে যাবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু পাওনা না পেয়ে ঠিকাদার মাঝপথে কাজ থামিয়ে দেন। ওই ঠিকাদার জানান, টাকা এলেই দ্রুত কাজ শুরু করবেন।
এ দিন দুর্গাপুর আদালতের নতুন ভবনও পরিদর্শনে যান বিচারপতি। সঙ্গে ছিলেন মলয়বাবু। এখনকার একতলা ভবনটি চারতলা করা এবং পাশে নতুন আর একটি চারতলা ভবন গড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন। এখন দুর্গাপুর আদালতের অধিকাংশ কাজকর্ম চলে এডিডিএ-র কাছে ভাড়া নেওয়া একটি বাড়িতে। নতুন ভবনে সামান্য কিছু কাজকর্ম হয়। ভবিষ্যতে পুরো আদালতটিই নিজস্ব নতুন ভবনে তুলে আনা হবে। এ দিন প্রথমে পার্কিংয়ের জায়গা নিয়ে আপত্তি জানান বিচারপতি। পরে অবশ্য সীমানা পাঁচিলের বাইরেও জায়গা পড়ে রয়েছে দেখে আর আপত্তি জানাননি। মলয়বাবু জানান, নতুন ভবন পরিদর্শন করে গেলেন বিচারপতি। তিনি রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন।