আলোচনা: কেতুগ্রামের সভায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও শেখ সাহানেওয়াজ। —নিজস্ব চিত্র।
যাঁর স্মরণে সভা করলেন অনুব্রত মণ্ডল, তাঁর পরিবারের কাউকেই দেখা গেল না সভামঞ্চে। তৃণমূলের দ্বন্দ্ব সামনে এল স্মরণসভাতেও!
মঙ্গলবার কান্দরা ডাকবাংলো বাজারে কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখের স্মরণসভায় এই খুনে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের আঁতাঁত রয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। এবং দাবি করলেন, ‘‘এফআইআরে কারও নাম থাকলেই সে আসামি হয়ে যায় না!’’ এই মন্তব্য শুনে জাহেরের অনুগামীদের অভিযোগ, যে খুনের ঘটনায় তাঁদের দলেরই নেতা-কর্মীদের নামে অভিযোগ হয়েছে, সেখানে অভিযুক্তদের হয়েই কার্যত সওয়াল করলেন অনুব্রত।
গত বুধবার রাতে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে মোটরবাইকে ফেরার পথে গুলিতে খুন হন জাহের শেখ। তাঁর খুড়তুতো ভাই নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে ওই পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গির শেখ, তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল শেখ, সাউদ মিঞা-সহ ১২ জনের নামে খুনের অভিযোগ করেন। জাহেরের স্ত্রীও দলের লোকেদের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছিলেন। এ দিন অবশ্য সভামঞ্চে নিহত নেতার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই কাউকেই দেখা যায়নি। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, তাঁরা সভায় আসার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। তবে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, সোমবার জাহেরের বাড়ি খাসপুরে একটি শোক মিছিলে গিয়েছিলেন তাঁরা।
এ দিন জাহের শেখের ছবিতে মাল্যদানের পরে বীরভূমের তৃণমূলের সহ-সভাপতি, অনুব্রতর ছায়াসঙ্গী রাণা সিংহ বলেন, ‘‘সামনে পঞ্চায়েত ভো়ট। একটা জাহের খুন হলেও হাজার জাহের দাঁড়িয়ে আছে!’’ এর পরে কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের পিঠ চাপড়ে অনুব্রত বলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন এই ছেলের মনে কোনও পাপ নেই। ওঁর সাথে আলোচনা করেই কাজ করবেন ব্লক সভাপতি ও অঞ্চল সভাপতিরা।’’ ঘটনা হল, এক সময়ে সাহানেওয়াজ ও তাঁর ভাই কাজল শেখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল জাহেরের। ইদানীং বেশ কিছু বিষয়ে দু’তরফে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। সাহানেওয়াজ আবার অনুব্রতর বিরোধী হিসাবেই পরিচিত। সেই বিধায়কেরই সমর্থনে এ দিন অনুব্রতর মন্তব্য শুনে দলেই ফিসফিসানি, নতুন কোনও সমীকরণ শুরু হচ্ছে কি?
এখানে সমীকরণ অহরহ বদলায়, জানে কেতুগ্রাম।