প্রতীকী ছবি
জেলার বেশির ভাগ নলকূপের জলই দূষিত। কাটোয়া ১ ব্লকের তিনটি নলকূপের জলে নতুন করে আর্সেনিক পেয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। দফতরের বর্ধমানের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সোমনাথ কুন্ডু বলেন, “আমরা জল পরীক্ষার রিপোর্ট সরাসরি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা বিভাগে পাঠিয়ে দিতাম। তাতে নজরদারি ঠিকমতো হতো না। এ বার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রিপোর্ট পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা বলেন, “ওই সব কলের জল পান করতে নিষেধ করা হয়েছে।’’
মে মাসে জুড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নলকূপের জল পরীক্ষা করে পিএইচই। রিপোর্ট অনুযায়ী, যতগুলি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার প্রায় অর্ধেক নলকূপে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে। বুধবার এই রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পেশ করার দিনই, রায়নার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক মানুষ ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও রায়না ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার রায়না ১-এর বিডিও সৌমেন বণিকের নেতৃত্বে একটি দল ওই এলাকায় পরিদর্শনে যান। তাঁরা জানান, দূষিত জল পান করার ফলেই পেটের রোগ ছড়িয়েছে।
পিএইচই দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, রায়না ১ ব্লকের ১১০টি নলকূপের জল পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৬১টিতেই ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মিলেছে। ওই দফতরেরই জনস্বাস্থ্য রিপোর্টে (‘স্যানিটারি সার্ভে’) দেখা যায়, রায়নার ওই ১১০টি মধ্যে ৮৮টি নলকূপের জল খাওয়া বেশ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “নমুনা রিপোর্টেই এই হাল! সব টিউবওয়েলের জল পরীক্ষা করা গেলে জল-দূষণ ভয়াবহ আকার নিত।’’
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, ‘স্যানিটারি সার্ভে’তে নলকূপের কাছে নর্দমা আছে কি না, আশপাশে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম হচ্ছে কি না, কমিউনিটি শৌচাগার থাকলে তার পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, নলকূপের কাছে জল জমছে কি না, চাতালের অবস্থা এ সব নিয়ে ১০টি প্রশ্ন থাকে। তার মধ্যে চারটির উত্তর ইতিবাচক হলেই ওই নলকূপের জল পান ঝুঁকির বলে ধরে হয়। ‘হ্যাঁ’ যত বাড়ে ঝুঁকি বাড়ে তত। জানা গিয়েছে ২৭৩৩টি নলকূপের ‘স্যানিটারি সার্ভে’ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘বেশি ঝুঁকি’ রয়েছে ৪৬৫টিতে। ‘খুব বেশি ঝুঁকি’ রয়েছে ৮৯টি টিউবওয়েলে। ‘ঝুঁকি’ রয়েছে ৫৬০টিতে। এ ছাড়াও ৭০৫টি জায়গায় নলকূপের চাতাল ভাঙা রয়েছে। জেলা পরিষদের দাবি, এক মাসের মধ্যে চাতালগুলি সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২৫৮৪টি নলকূপের পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জানিয়েছে, ১১৬৮টির জলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি ‘দূষিত’। খনিজ পদার্থ মিলেছে ৫৭৯টি কলে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “ওই জল পান করলে পেটের নানা রকম রোগ দেখা দেবে। আন্ত্রিক বা ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’’ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য) বাগবুল ইসলাম বলেন, “সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই জলশোধন করে দেওয়া হবে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।