—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
‘‘উচ্ছে, বেগুন, পটল, মুলো
বেতের বোনা ধামা-কুলো।’’
ছোটবেলায় সহজপাঠে বক্সীগঞ্জের পদ্মাপাড়ের হাটে আনাজ থেকে কলসি, ছাতা থেকে শীতের র্যাপারের বিক্রিবাটার কথা সবাই পড়েছি। এখনকার হাটে-বাজারেও উচ্ছে, বেগুন, পটল, মুলো বিক্রি হয়। তবে তার দামে বছরের বেশির ভাগ সময়েই হাত ছোঁয়ানো যায় না।
বর্তমানে জেলার পাইকারি বাজারগুলিতে আনাজের জোগান কমেছে কোথাও ৬০ শতাংশ, কোথাও তারও বেশি। ফলে খুচরো বাজারে চড়ছে আনাজের দর। থলি হাতে বাজারে এসে হাত পুড়ছে অনেকেরই। বুধবার বিভিন্ন বাজারে কেজি প্রতি বেগুন, কাঁকরোল, উচ্ছে কেজিতে একশো টাকার আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে। পটচল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়ষ কুমড়োর দাম খানিকটা কম। ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজির কাছাকাছি। আবার কচু, মুলো, বরবটির মতো আনাজের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহার করা টোম্যাটো, কাঁচা লঙ্কার দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা। ক্যাপসিকাম, বিনস, ডাঁটার দাম আরও বেশি। দু’শো টাকা বা তার উপরে দাম পৌঁছেছে কেজিতে।
কালনার চকবাজার থেকে বাজার করে ফেরার সময়ে রতন মালাকার বলেন, ‘‘এই সময় অন্যবার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ করলে ব্যাগ ভরে যায়। এ বার সেখানে ৫০০ টাকাতেও ব্যাগ অর্ধেক ভরছে না। চড়া দাম দিয়েও ভাল মানের ঝিঙে, কাঁকরোল, ফুলকপি পাচ্ছি না।’’ ধাত্রীগ্রামের কল্পনা দেবনাথের কথায়, ‘‘যে ভাবে হু হু গত দশ দিন ধরে আনাজের দাম বাড়ছে, তাতে কোথায় ঠেকবে কে জানে! দিনের বাজেটের অনেকটাই চলে যাচ্ছে আনাজের বাজারে।’’
কালনার জিউধারা, চকবাজার, ধাত্রীগ্রাম এবং পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড়, নিমতলা, পারুলিয়া, কালেখাঁতলা, জামালপুরের মতো পাইকারি আনাজের বাজারগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সর্বত্রই জোগান কম। কালেখাঁতলা বাজার কমিটির সদস্য তথা এক আড়তদার ক্ষুদিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘এই সময় অন্যবার যথেষ্ট জোগান থাকে। এ বার শুধু পটলের জোগান ঠিকঠাক রয়েছে। বাকি আনাজের জোগান ৮০ শতাংশ কম। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানা নেই।’’ পূর্বস্থলীর এক আড়তদারও বলেন, ‘‘রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ফড়েরা পাইকারি বাজারে এসে গাড়ি বোঝাই করে আনাজ নিয়ে যান। চাষিরা আনাজ কম আনায় তাঁদেরও দেখা মিলছে না।’’
কেন এই পরিস্থিতি? চাষিরা দুষছেন, খারাপ আবহাওয়াকে। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ভাল বৃষ্টি নেই। দিনের তাপমাত্রা বাড়ায় আনাজের গাছ জমিতেই ঝিমিয়ে পড়ছে। বহু এলাকায় জলস্তর নেমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। গাছের বৃদ্ধি কমেছে। পূর্বস্থলীর আনাজ চাষি রমজান মণ্ডল বলেন, ‘‘এই সময় দফায় দফায় বৃষ্টি মেলে। এ বার ঘূর্ণিঝড়ের পরে বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা এত বেশি যে তা কাজে আসেনি। বিঘা চারেক জমিতে ঢ্যাঁড়শ, বরবটি, পটলের চাষ করেছি। স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ছ’গুণ উৎপাদন কমেছে।’’ আনাজ চাষিদের অনেকেরই দাবি, লাগাতার শুকনো আবহাওয়ায় রোগপোকার হামলাও তুলনায় বেশি। ফলে যেটুকু আনাজ মিলছে তার মান ভান হচ্ছে না।
জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ায় কিছু কিছু এলাকায় আনাজ খেতে ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। তীব্র গরমে গাছের বাড়ও কমেছে। কিছুটা বৃষ্টি হলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’