প্রতীকী চিত্র।
পুলিশের পাশাপাশি, শিশু ‘বিক্রি’ নিয়ে তদন্ত শুরু করল জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। শিশু বিক্রিতে অভিযুক্ত নার্সিংহোমের টেকনিশিয়ান শৈলেন রায়কে বর্ধমানের ভাঙাকুঠি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার ওই নার্সিংহোমে তদন্তেও যায় এসিএমওএইচ (বর্ধমান সদর) আত্রেয়ী চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি দল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “বেশ কিছু বেনিয়ম পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বুধবার কাটোয়ার পানুহাটের দিঘিরপাড় এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পতি প্রদীপ বিশ্বাস ও অনুশ্রী বিশ্বাসকে শিশু কেনার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় কাঠের মিস্ত্রি প্রদীপবাবু গত ২৮ জুন বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়ে ওই নার্সিংহোম থেকে শিশুটি কেনেন। ওই টেকনিশিয়ান, দাঁইহাটের বাসিন্দা শৈলেন রায় শিশুটি তাঁদের বিক্রি করেন বলে অভিযোগ। ওই নার্সিংহোমের অন্যতম অংশীদার তথা চিকিৎসক মোল্লা কাশেম আলি শিশুটি প্রসব করিয়েছিলেন বলেও জেনেছে পুলিশ।
শুক্রবার ওই চিকিৎসক বলেন, “আমি বেঙ্গালুরুতে এসেছি। আমার ধারণা, নাম পরিবর্তন করে কেউ ভর্তি হয়ে প্রসব করিয়েছে। অথবা আমাকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছে। এখন সব মনে পড়ছে না। তবে পুলিশ বা স্বাস্থ্য দফতরকে সহযোগিতা করব।’’
তদন্তে নেমে স্বাস্থ্য দফতর ওই শিশুর জন্মের কোনও নথির হদিস পায়নি। শুধু একটি জায়গায় প্রসব করানোর নথি মিলেছে। এ ব্যাপারে সোমবার ফের সরেজমিন তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আত্রেয়ীদেবীরা। পুলিশও জানিয়েছে, নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পাওয়ার নথি ছাড়া, আর কিছু দেখাতে পারেননি ওই দম্পতি। এ দিন ধৃত তিন জনকে কাটোয়া আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। অভিযুক্ত শৈলেনবাবুর স্ত্রী রাসমণি রায় দাবি করেন, ‘‘উনি ছ’বছর ধরে ওই নার্সিংহোমে কাজ করছেন। আগে কখনও এমন অভিযোগ আসেনি। এই অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
ভাঙাকুঠি এলাকার ওই নার্সিংহোম নিয়ে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। কখনও বিনা লাইসেন্সে আইসিইউ চালানো, কখনও পরিকাঠামো ছাড়াই আইসিইউ লিখে রাখার অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতর বারবার ব্যবস্থাও নিয়েছে। রোগী মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগেও অশান্ত হয়েছে ওই নার্সিংহোম।
এ দিন নার্সিংহোমে গেলে রোগীরা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওই নার্সিংহোমে চিকিৎসক, নার্সদের দেখা মিলছে না। কয়েকজন কর্মী মিলে ৮০ জন রোগীকে সামাল দিচ্ছেন। গলসি ও কাটোয়ার বাসিন্দা, দুই চিকিৎসাধীনদের দাবি, “দালালেরাই নার্সিংহোমে ভর্তি করেছেন। অনেক রোগী পরিষেবা না পেয়ে চলে গিয়েছেন।’’
তদন্তকারীরা জানান, যে সব চিকিৎসকদের নাম লিখে রোগী ভর্তি করা হয়, তাঁরা কেউ ওই নার্সিংহোমে যান না। কিছু ‘ভাড়াটে’ চিকিৎসকদের দিয়ে নার্সিংহোম চালানো হয়। এ ছাড়া, সাধারণ চিকিৎসককেও শল্য চিকিৎসক হিসাবে দেখানো হয়। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নেই বলেও জানান তদন্তকারীরা। সিএমওএইচ বলেন, “শিশু বিক্রি ঘটনার আগে ও পরের সমস্ত নথি, নার্সিংহোম চালানোর সমস্ত নথি নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে।’’