guard

বাড়ি ফিরে আর খাওয়া হল না, আক্ষেপ গার্ডের পরিবারে

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ভেদিয়ার কাছে রেলসেতুর নীচে অজয়ের জলে রবিবার সকালে দেহ মেলে ট্রেনের গার্ড দেবীপ্রসাদবাবুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৫:২৯
Share:

ভেদিয়ায় এই সেতুর নীচে অজয় থেকেই মেলে ট্রেনের গার্ডের দেহ। নিজস্ব চিত্র

ডিউটি সেরে এসে দুপুরে বাড়িতে এক সঙ্গে ভাত খাওয়ার কথা স্ত্রীকে বলেছিলেন রেলকর্মী দেবপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় (৫৭)। ভোর ৫টার সময় বাড়ি থেকে ডিউটিতে বেরিয়ে সেই যাওয়াটাই যে শেষ যাওয়া হবে ভাবতেই পারছেন না দেবপ্রসাদবাবুর স্ত্রী জয়শ্রীদেবী।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ভেদিয়ার কাছে রেলসেতুর নীচে অজয়ের জলে রবিবার সকালে দেহ মেলে ট্রেনের গার্ড দেবীপ্রসাদবাবুর। ট্রেন থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। দুপুরে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে আউশগ্রাম থানায়।

বছর ছয়েক আগে আসানসোল থেকে বদলি হয়ে রামপুরহাটে কাজে যোগ দিয়েছিলেন দেবপ্রসাদবাবু। তার পরেই স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়েকে নিয়ে পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লিতে নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন। সারদাপল্লিতেই দেবপ্রসাদবাবুর শ্বশুরবাড়ি। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ নিজের বাড়িতেই স্বামীর সহকর্মীদের কাছ থেকে দুঃসংবাদটা পান জয়শ্রীদেবী। তা শুনেও বিশ্বাস করতে পারেননি। এর পরেই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।

Advertisement

এ দিন দুপুরে জয়শ্রীদেবী জানান, রেলকর্মীদের কাজের জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রামপুরহাট থেকে বর্ধমানে স্পেশাল ট্রেন নিয়ে যাওয়ার জন্য রবিবার রাত ৩টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠেছিলেন দেবপ্রসাদবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ভোরে ডিউটিতে যাওয়ার সময়ে জলখাবারে রুটি নিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে দুপুরে ফিরে ভাত খাওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই মতো রান্না করে রেখেছিলাম। কিন্তু যাঁর জন্য রান্না করেছিলাম তিনিই তো ফিরলেন না।”

জয়শ্রীদেবী জানান, নলহাটি থানার বানিওর গ্রামে পারিবারিক জমিতে ধান চাষ নিয়ে ইদানীং খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্বামী। মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্তও ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ডিউটিতে বেরিয়ে যাওয়ার পরে আর ফোন করেননি। ভেবেছিলাম, ট্রেন সকাল ৮টা নাগাদ বর্ধমানে পৌঁছলে ফোন করব। সকাল ৮টা নাগাদ বাড়িতে এসে ওঁর সহকর্মীরা জানান, উনি ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছেন।’’ কথা শেষ করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন জয়শ্রীদেবী।

মায়ের কান্না দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ২২ বছরের মেয়ে দেবীশ্রীও। মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কী ভাবে কী হল বুঝতেই পারছেন না দেবপ্রসাদবাবুর বৃদ্ধ শ্বশুরমশাই বিবেকানন্দ রায়ও। তাঁর কথায়, “টিভিতে দেখলাম। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল ভাবতেই পারছি না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement