গোলমালের পরে ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ফের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে তেতে উঠল গলসি। রবিবার সকালে গলসি ১ ব্লকের রামপুর গ্রামে হামলা ও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ পাঁচ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে প্রথমে পুরসা ব্লক হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দু’জনকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে।
গলসিতে তৃণমূলের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ উঠছে। এ দিনও শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যেই গোলমাল বাধে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। গলসির তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অলোক মাজির বক্তব্য, ‘‘যারা ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে মারপিট-বোমাবাজি করছে, তারা যদির দলের কেউ হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার আগে পুলিশকে বলছি, কোন দল না দেখে ব্যবস্থা নিতে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই তাদের মধ্যে বারবার অশান্তি বাধছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের যুব সভাপতি পার্থসারথী মণ্ডলের গোষ্ঠীর লোকজন দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে রামপুর গ্রামের দুই সংসদে ভোটে দাঁড়ান দলের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। তবে ভোটে দুই আসনেই পরাজিত হন নির্দল প্রার্থীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের বেরোনোর পর থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল চরমে উঠে। গ্রামের একটি পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দখল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। কয়েকবার মারপিটও বাধে। শনিবার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব ঘোষের এক অনুগামীকে মারধরের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে গ্রামে উত্তেজনা তৈরি হয়। অভিযোগ, রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর লোকজনের উপরে হামলা চালানো হয়। গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, এলাকায় বোমাবাজিও হয়েছে। বোমার আঘাতে মানিক ঘোষ নামে এক জন আহত হন। দু’জনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ। মারে আহত হয়েছেন মানিকের স্ত্রী অনিমাদেবী-সহ দু’জন।
অনিমাদেবীর অভিযোগ, ‘‘সকালে জয়দেব লোকজন নিয়ে এসে হামলা চালায়, বোমা ছোড়ে। আমার স্বামীর মাথায় বোমার আঘাত লেগেছে।’’ আহত বুদ্ধদেব ঘোষ, তন্ময় ঘোষদের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই গ্রামে অশান্তি চলছে। কিছু দিন আগে রেশন চাল চুরি করেছিল জয়দেবরা। পরিযায়ী শ্রমিকদেরও চাল চুরি করেছে। তার প্রতিবাদ করার কারণেই এই হামলা।’’
যদিও চাল চুরি থেকে হামলা, সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন জয়দেববাবু। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘শনিবার আমাদের কর্মী জগাই বাগদিকে কোনও কারণ ছাড়াই ওরা মারধর করে। এ দিন সকালে আমরা যখন ওদের কাছে জানতে গিয়েছিলাম, কেন ওরা জগাইকে মেরেছে, তখনই আমাদের উপর হামলা চালায়।’’ তাঁর দাবি, হামলাকারীরা আগে তৃণমূল করতেন। পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল ছিলেন। এখন বিজেপিতে যোগ দিয়ে গ্রামে অশান্তি পাকাচ্ছেন।
তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতি পার্থ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘কী কারণে দলের মধ্যে অশান্তি হল, তা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন অবশ্য দাবি করেন, ‘‘দলের কর্মীরা ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় নেই। গ্রামীণ বিবাদ নিয়ে বিজেপি অশান্তি করছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’
বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘চুরির চাল ভাগাভাগি নিয়ে তৃণমলের দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজি হয়েছে। চাল চুরি ঢাকতে এক গোষ্ঠীকে বিজেপি বলে চালাতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু গ্রামের মানুষ সব জানেন।’’