বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল। নিজস্ব চিত্র
বর্ধমান স্টেশনের দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে বৃহস্পতিবারই জেলায় এসেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাতে ছিলেন সার্কিট হাউসে। শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তিনি। তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি সদস্যদের একাংশ। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে এসএফআইও রাজ্যপালের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। এ দিন গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহে প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বপ্ন’কে বাস্তবায়িত করার কথা বলেন রাজ্যপাল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘রাজনৈতিক মন্তব্য’ কেন, প্রশ্ন তুলে তরজায় নামে ছাত্র সংগঠনগুলি। তবে রাজ্যপাল উপস্থিত থাকলেও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য বা সহ-উপাচার্যকে সভায় দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
শুক্রবার সাড়ে ১০টা নাগাদ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আসেন রাজ্যপাল। গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের মূল দরজার সামনে দু’দিকে দাঁড়িয়েছিল টিএমসিপি। দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করে রেখেছিল পুলিশ। রাজ্যপালের গাড়ি ঢুকতেই কালো পতাকা দেখান ওই পড়ুয়ারায় আওয়াজ ওঠে ‘গো-ব্যাক’। অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময়েও একই রকম দৃশ্য দেখা যায়। যদিও রাজ্যপাল দুই সংগঠনের বিক্ষোভ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “আমি খুবই সন্তুষ্ট। সুপ্রিম কোর্ট ‘বাংলা মডেলে’র আদেশ দিয়েছে। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এই উদ্যোগকেই ‘বাংলা মডেল’ বলা হচ্ছে। কোনও দ্বন্দ্ব নয়, আলোচনা করতে হবে। দ্বন্দ্বে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।”
এ দিন সভার শুরুতেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রাজ্যপালকে অবহিত করেন রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী। পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে ‘উন্নয়নশীল’ থেকে ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘উন্নীত দেশে’ নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন রাজ্যপাল। যুবকদের জন্য অনেক প্রকল্প আনা হচ্ছে বলে জানান। যুবক, যুবতীদের শৃঙ্খলাপরায়ণ ও নিয়মানুবর্তিতার কথা বলেন। ছাত্রছাত্রীদেরকে দেখিয়ে তিনি বলেন, “আমার সামনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরা বসে আছে। বাংলার যুবকেরা আত্মবিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, যুবকদের আত্মবিশ্বাস গড়তে হবে। ভারতের যুবকরাই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। যুবকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে খুব সুন্দর ভাবে পরিবর্তন হবে।” রবীন্দ্রনাথের নাম নিয়ে পড়ুয়াদের তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত’।’’ ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানের দু’লাইনও
বলেন তিনি।
রাজ্যপালের এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে টিএমসিপি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক খোন্দেকার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা কালো পতাকা আর বিক্ষোভ দেখিয়েছি। উনি (রাজ্যপাল) বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে সমস্যা মেটানোর বদলে রাজনীতি করছেন। ছ’মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা চলছে।” এমবিএ-র ছাত্র অমরজিৎ ঘোষও বলেন, “স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা চাই, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যপাল উপাচার্য নিয়োগ করুন।” এসএফ্আইয়ের জেলা কমিটির সদস্য অয়ন মণ্ডল ও রাণা দাসেরাও দাবি, এখন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি প্রত্যাহার বেশি জরুরি। এবিভিপির বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাজেন সেনের যদিও দাবি, “উন্নয়নশীল থেকে উন্নীত দেশের পথে আমরা এগিয়ে চলেছি, রাজ্যপাল সেই কথা উল্লেখ করেছেন। টিএমসিপি ও এসএফআই যোগসাজস করে বিরোধিতা করছে।”