পাহারা জঙ্গলের পথে। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়া থেকে হাতি ঢুকে পড়েছিল গলসিতে। এ বার যাতে সেই পরিস্থিতি না হয়, তাই আগাম সতর্ক থাকছে বন দফতর। আউশগ্রামে জঙ্গলের রাস্তায় যাতায়াতের পথেও পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনও জন্তুর শিকার না হয়, সেই জন্য জঙ্গলের পথে টহলের ব্যবস্থা রাখছে বন দফতর।
জেলা বনাধিকারিক বা ডিএফও (পূর্ব বর্ধমান) নিশা গোস্বামী বলেন, “জেলার হাতির করিডরের ১৩টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ১১টি দল গঠন করা হয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করবে। দামোদর ধারে থাকা দলটিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। হাতির দামোদর পার হওয়া আটকাতে জল-বোমা ব্যবহার করা হবে।”
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মাঝরাতে দামোদর পেরিয়ে হাতি ঢুকে পড়ে গলসি ১ ব্লকের রণডিহায়। সেখান থেকে চাকতেঁতুল, গোমহল, পাণ্ডদহ হয়ে হাতিটি আশ্রয় নিয়েছিল সোদপুর মানায়। হাতিটিকে ধাওয়া করে বর্ধমান ও বাঁকুড়ার হুলা পার্টি। তাকে বাগে আনতে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে হয় বন দফতরকে। হাতি কাবু হওয়ার পরে ট্রাকে তুলে ঝাড়গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
জেলা বন দফতরের দাবি, প্রতিদিন বাঁকুড়ার সঙ্গে সমন্বয় রেখে হাতির গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। গত বারের থেকে শিক্ষা নিয়ে দামোদর ধারে থাকা দলটিকে ২৪ ঘণ্টা সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা বন দফতরের দাবি, আউশগ্রাম, গলসি, বুদবুদ এলাকার ১৫টির মতো স্কুল ‘হাতি-করিডর’ ও জঙ্গলের ভিতর রয়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক অমিতকুমার ঘোষ বলেন, “বন দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জঙ্গল এলাকাতেও পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা দেখতে বলা হয়েছে।’’ এডিএফও সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “আউশগ্রামের জঙ্গলের রাস্তায় আমাদের গাড়ি টহল দেবে। পরীক্ষার্থীদের পাহারা দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে
যাওয়া হবে।”
কাল, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। পরীক্ষা সূচি বদলের কারণে সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে শুরু করবে পরীক্ষার্থীরা। পরিবহণে সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য মঙ্গলবার বিকেলে পরিবহণ সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। ওই দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে বাস রাস্তায় থাকা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যে সব রুটে বাস কম বা সকালের দিকে বাস নেই সেখানেও যাতে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল থাকে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিয়কুমার দাস বলেন, “সকাল ৬টা থেকেই পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টরেরা রাস্তায় থাকবেন। আমরাও নজরদারি করব। আশা করি, কোনও অসুবিধা হবে না।”
পর্ষদের মনিটরিং কমিটির দাবি, জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অটো-টোটো সংগঠন, বিধায়কদের বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এসবিএসটিসিও অতিরিক্ত বাস চালাবে বলে জানিয়েছে।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, “পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে দিকে আমাদের কড়া দৃষ্টি রয়েছে।”
এ ছাড়া ফটোকপি করার দোকান ও খোলা জায়গায় মাইক বাজানোর উপরে প্রতিবারের মতোই নিষেধাজ্ঞা থাকছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার নজরদারিও থাকছে। পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করার অধিকারও শুধুমাত্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মী, নির্দিষ্ট জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্স, পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থাও থাকছে।