প্রচার। কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরে। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর শীত পড়তেই বহু মানুষ কাঁকসার গড় জঙ্গল এলাকায় পিকনিক করতে আসেন। বিশেষ করে দেউল লাগোয়া পিকনিক-স্পটে। তবে কিছু মানুষ ভিড় থেকে দূরে সরে জঙ্গলের মাঝে পিকনিক করেন। এ বছর থেকে জঙ্গলের ভিতরে পিকনিক করা যাবে না, এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করল বন দফতর।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জঙ্গলে রয়েছে বহু প্রাচীন গাছ। বাড়ছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও। গড় জঙ্গলের দেউল লাগোয়া এলাকায় বেশ কয়েক বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছে হরিণ ও ময়ূরের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে হরিণের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। পাশাপাশি, রয়েছে শ্যামারূপার মন্দির। এ সবের টানেই বছরভর গড় জঙ্গলে বহু পর্যটক ভিড় জমান। তবে শীত পড়তেই এখানে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পিকনিকের জন্য গড় জঙ্গল এলাকায় বহু মানুষই ভিড় করেন।
বন্যপ্রাণের কথা মাথায় রেখে গত কয়েক বছর ধরেই বন দফতর গড় জঙ্গল এলাকায় পিকনিকের জন্য নানা বিধিনেষেধ আরোপ করে। ডিজ়ে বক্স থেকে থার্মেকলের ব্যবহার সবই নিষিদ্ধ। তবে এ বার ডিএফও (বর্ধমান ডিভিশন) নিশা গোস্বামী বলেন, “জঙ্গলের ভিতরে আর পিকনিক করা যাবে না। আমরা জঙ্গল বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আমাদের কর্মীরা লাগাতার প্রচারও করছেন। পিকনিকের মরসুমে নজরদারিও বাড়ানো হবে।” কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? বনকর্মীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, পিকনিক করতে আসা লোকজন যাবতীয় বর্জ্য জঙ্গলে ফেলে যাচ্ছেন। এর ফলে, বন্যপ্রাণীরা সেগুলি খেয়ে সমস্যায় পড়ছে। আবার ডিজ়ে বক্সের শব্দে বন্যপ্রাণীরা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পালিয়ে যেতে চাইছে। সে সময় রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হতে পারে বন্যপ্রাণীগুলি। বন দফতরের দুর্গাপুরের রেঞ্জ অফিসার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জঙ্গলকে কোলাহল থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাও করতে হবে। তা ছাড়া, এ সময় শুকনো আবহাওয়া থাকায় জঙ্গলে আগুন লাগার প্রবণতাও বাড়ে। অসাবধানতার কারণে জঙ্গলে আগুন লাগলে জঙ্গলের প্রাণী ও গাছের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তবে বন দফতর জানিয়েছে, দেউলে পিকনিক স্পটে পিকনিক করা যেতেই পারে। কিন্তু থার্মোকল, ডিজ়ে বক্সের ব্যবহার করা যাবে না। সে বিষয়ে প্রচারও চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও জঙ্গল বাঁচানোর কাজে লাগাচ্ছে বন দফতর। সামগ্রিক ভাবে ঘুরতে আসা লোকজন বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। পলাশ মুখোপাধ্যায়, অনির্বান মণ্ডলেরা বলেন, “জঙ্গলে প্রাণীদের শান্তিতে রাখাটা খুব দরকার। জঙ্গল বাঁচলেই আমরাও নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারব।”