ভাতারের উষাগ্রামে ঘটনাস্থল। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
মাঝরাতে বিকট আওয়াজ, সঙ্গে ‘আগুন আগুন’ চিৎকার শুনে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন গ্রামের লোক। দেখা যায়, বাড়ির একাংশ ভেঙে জ্বলছেন এক বৃদ্ধা। সব মিলিয়ে বুধবার রাতে তুলকালাম বাধে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের উষাগ্রামে। বৃহস্পতিবার সকালে ৬২ বছরের ওই বৃদ্ধা সুমিত্রা কর্মকারকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধা ভাল আছেন।
কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, তা নিয়ে ধন্ধে রয়েছে জেলা পুলিশ। দমকল, বিদ্যুৎ ও ফরেন্সিক বিভাগের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দমকল ও বিদ্যুৎ দফতরের বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল ঘুরে নমুনাও সংগ্রহ করেন। ফরেন্সিক বিভাগও নমুনা সংগ্রহ করবে বলে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। পুলিশ সুপার (বর্ধমান পূর্ব) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়ার পরে কী ঘটেছিল, তার ব্যাখা দিতে পারব।’’ তবে পুলিশের একাংশের ধারণা, ইটের গাঁথনি দেওয়া দোতলা বাড়ির চাল অ্যাসবেস্টসের। একতলার ছাদেও অ্যাসবেস্টস রয়েছে। কয়েকবছর আগে তার উপরেই ঢালাই দেওয়া হয়। সে ভার সহ্য করতে না পেরেই অ্যাসবেস্টসটি ভেঙে পড়ে। তার পরে শর্ট সার্কিট হয় বলে তাঁদের অনুমান।
এ দিন হাসপাতালে ভর্তি জখম বৃদ্ধা দাবি করেন, ‘‘ভোর ৪টে নাগাদ একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা থেকে উঠতেই হুড়মুড় করে সব ভেঙে পড়ে। আমার শাড়িতেও আগুন ধরে যায়। দরজার খিল কোনও রকমে খুলে দিতে পেরেছিলা।’’ তাঁর মেজ বৌমা রাখিদেবীর কথায়, ‘‘আওয়াজ শুনে ছুটে আসি। বারান্দায় দেখি মায়ের কাপড় জ্বলছে। কম্বল দিয়ে আগুন নেভানো হয়। তারপর গাড়ি করে বর্ধমানের হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার তিন ছেলে। পাঁচ বছর আগে ছোট ছেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বড় ছেলে থাকেন আউশগ্রামের ভেদিয়ায়। মেজ ছেলে বিপদতারণ, পেশায় দিনমজুর মায়ের কাছেই থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিঁড়ি ও ঘরের ছাদের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। এ রকম বিপদ কেন হল, বুঝতে পারছি না।’’ গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বিকট আওয়াজ শুনে তাঁরা ভেবেছিলেন, পাথরের গাড়ি বা ওই জাতীয় কিছু উল্টে গিয়েছে। কেউ কেউ বিস্ফোরণ হয়েছে বলেও মনে করেছিলেন। ছুটে গিয়ে জখম মহিলাকে উদ্ধার করে বর্ধমানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। শ্যামল মাঝি, জটায়ু মাঝিদের কথায়, ‘‘অনেক রকম ভেবেছিলাম। পরে দেখলাম, সে রকম কিছু নয়। তবে কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, বোঝা যাচ্ছে না।’’ বিদ্যুৎ ও দমকল দফতর জানিয়েছে, নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পরে, পুলিশকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।