আউশগ্রামে আলুর জমি থেকে জল বার করছেন চাষিরা। নিজস্ব চিত্র।
রবি মরসুমে দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না চাষিদের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে মেঘলা আবহাওয়া। জমাট বাঁধা মেঘ থেকে কোথাও কোথাও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। এমন আবহাওয়া আলু এবং আনাজের পক্ষে ক্ষতিকারক জানিয়েছেন কৃষি আধিকারিকেরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ছ’বার দুর্যোগ এসেছে। একটা দুর্যোগ কাটার সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই ফের নেমেছে ঝড়-বৃষ্টি। তার জেরে, বার বার ধাক্কা খাচ্ছে রবি চাষ। এ দিন এক বারের জন্যও রোদের দেখা মেলেনি। মেঘলা আবহাওয়ায় শীত খানিক কম বোধ হয়। তবে চিন্তা জাঁকিয়ে বসেছে আলু চাষিদের।
মেমারির আলু চাষি গোবিন্দ ঘোষ বলেন, ‘‘৩০ বছর ধরে আলু চাষ করছি। আগে কখনও একটা মরসুমে এত বার দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়নি। এ বার চাষের শুরু থেকে বার বার মেঘ-বৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়েছে। যত খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছি, তত কীটনাশক কিনতে হচ্ছে। ফলে, চাষের খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।’’ কালনার আলু চাষি ফারুক শেখও বলেন, ‘‘বৃষ্টির কারণে আলু চাষের শুরুতেই প্রচুর বীজ পচে নষ্ট হয়েছিল। ফের বীজ কিনে এবং জমি তৈরি করে চাষ করতে খরচ বেড়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, বর্তমানে আলু গাছের বয়স কোথাও ৪৫ দিন, কোথাও ৫০ দিন। এখনও বেশ কিছু দিন জমিতে গাছ থাকবে। তবে যে ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসছে, তাতে ফলন কতটা হবে তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। চাষিদের একাংশের দাবি, ছত্রাকঘটিত নাবিধসা রোগ দেখা দিয়েছে কিছু কিছু জমিতে। মেঘলা আবহাওয়া চললে, দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়বে, দাবি তাঁদের।
জেলার এক কৃষি আবহাওয়াবিদ কিশোরগোপাল দত্ত বলেন, ‘‘দুই সারিতে লাগানো আলু গাছের মাঝে চাষিরা জল দেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে গাছের শিকড়ে পৌঁছে যায় জল। বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরাসরি আলু গাছের গোড়ায় জল পড়লে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।’’
আবহাওয়ার জেরে ক্ষতি হচ্ছে আনাজেও। এ বার শীতের মরসুমে আনাজ সে ভাবে সস্তা হয়নি। তার মূল কারণ জোগান, দাবি চাষিদের। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলা বাজার কমিটির সম্পাদক ক্ষুদিরাম মাহাত জানিয়েছেন, রবি মরসুমে বার বার মেঘলা আবহাওয়া এবং বৃষ্টির কারণে আনাজ চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। আনাজের উৎপাদনও প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটা কম। জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে। তবে এই পরিস্থিতিতে ছত্রাকের হামলা নিয়ে চাষিদের সজাগ থাকতে হবে।’’