গরমে শুকোচ্ছে আনাজ, কালনার রাহতপুরে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
কালবৈশাখী সাময়িক স্বস্তি দিয়েছিল। তার পরে ফের চড়ছে পারদ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ায় অস্বস্তিও বেড়েছে। এর ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে চাষাবাদে। বৃষ্টির অভাবে চাষিরা আমন ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরুই করতে পারেননি।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬-১০ মে কিছুটা বৃষ্টি মেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে ঘোরাঘুরি করেছে ৩১-৩৩ ডিগ্রির মধ্যে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে হয়েছিল ২১-২৩ ডিগ্রি। তার পরে ১৪ মে থেকে ফের বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা। শুক্রবার তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৩৭ ডিগ্রির আশপাশে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ায় বেলা ১০টার পরে বাইরে বেরোলেই ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল হতে হয়েছে মানুষকে। ঘামে ভিজছে শরীর।
অস্বস্তি বাড়ায় বেলা ১১টার আগেই মাঠ থেকে উঠে আসতে হয়েছে খেতমজুরদের। কালনা থেকে শুরু করে পূর্বস্থলী ১ কিংবা মন্তেশ্বর— সর্বত্রই একই ছবি। অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরিয়েছেন মুখ, হাত ঢেকে। গরমের হাত থেকে টোটো ও ভ্যান চালক-সহ পথচারীদের স্বস্তি দিতে এ দিন কালনা শহরে হয়েছে বেশ কয়েকটি জলদান শিবির।
আবহাওয়াবিদ কিশোরগোপাল দত্ত বলেন, ‘‘গ্রীষ্মের শুরুতে +তাপমাত্রা যে ভাবে বেড়েছিল, এখন তার তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে জলীয় বাষ্প বাড়ায় অস্বস্তি বেড়েছে।’’ চাষিরা জানিয়েছেন, জলের অভাবে ফাটতে শুরু করেছে পাট, তিল, আনাজের জমি। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পাটচাষি সাইদুল শেখ বলেন, ‘‘মাস খানেক বয়স হয়েছে পাট গাছের। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি মেলায় পাটগাছ ভাল ভাবে বাড়তে শুরু করেছিল। তাপমাত্রা বাড়ায় জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। ঝিমিয়ে পড়ছে গাছ।’’ মাচায় থাকা উচ্ছে, ঝিঙে, করলা, বরবটির মতো আনাজ গাছ গরমে হলুদ হতে বসেছে। কমতে শুরু করেছে আনাজের ফলন।
জেলায় সব থেকে বেশি চাষ হয় আমন ধানের। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চাষিরা শুরু করেন বীজতলা তৈরির কাজ। কালনা ১ ব্লকের বাসিন্দা, ধানচাষি সবুজ মণ্ডল বলেন, ‘‘সাধারণত কালবৈশাখীর প্রকোপে এই সময় ভাল পরিমাণ বৃষ্টি মেলে। এ বার তা হচ্ছে না। ফলে আমনের বীজতলা তৈরির কাজ এগোয়নি।’’ পূর্বস্থলী ২ ব্লকে রয়েছে প্রচুর আমবাগান। চাষিরা জানিয়েছেন, এ বার আমের ফলন এমনিতেই অনেক কম। তার উপরে শুষ্ক আবহাওয়া চলতে থাকায় বোঁটা আলগা হয়ে ঝরে পড়ছে বহু আম।
জেলার এক সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘চাষের জন্য এই সময় ভাল বৃষ্টি প্রয়োজন হয়। বৃষ্টিতে পাট গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়। পুকুর, নদী, নালাতে বৃষ্টির যে জল সঞ্চিত হয়, তা জুলাই মাসে পাট পচানোর কাজে লাগে। পাশাপাশি, এই সময়ে আমনের বীজতলা তৈরির জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন। এখন কিছুটা শুষ্ক আবহাওয়া চলছে। তবে আশা করছি দ্রুত বৃষ্টি মিলবে।’’