মাঠ জুড়ে বাঁশের খুঁটি, তৈরি হয়েছে মঞ্চও। নিজস্ব চিত্র
মাঠে জুড়ে গর্ত করে বাঁশ পোঁতা হয়েছে। বাঁধা হয়েছে মঞ্চ। আবার কোথাও তৈরি করা হয়েছে এলইডি আলোর টাওয়ার। বাঁশ, মঞ্চ সাজানোর জিনিসপত্র নিয়ে ক্রমাগত মাঠে চলাচল করছে গাড়িও।
বুধবার পুরভবনের সামনের স্পন্দন কমপ্লেক্সের এমন হাল দেখে স্তম্ভিত বর্ধমান শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের একটা বড় অংশ। শনি ও রবিবার ফুটবল প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, পর্যটন দফতরের মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, মাঠটি ‘আগের অবস্থায়’ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
২০০৮ সালে অলিভার কানের অবসরের সময়ে স্পন্দন কমপ্লেক্সের মাঠ ঘুরে দেখে গিয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের কর্তারা। অ্যাকাডেমি গড়ারও কথা ছিল। বদলে ফেলা হয়েছিল মাঠের খোলনলচে। ৫৩ লক্ষ টাকা খরচ করে মাঠ, স্টেডিয়াম, ক্লাব হাউস তৈরি করা হয়। গ্যালারির তলায় ঘর তৈরি করা হয়। পরে বায়ার্ন মিউনিখের অ্যাকাডেমি না হলেও মাঠে খোঁড়খুঁড়ি করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। তাঁদের দাবি, বর্ধমান শহরে মাঠ বলতে দুটি, রাধারানি স্টেডিয়াম ও স্পন্দন কমপ্লেক্স। ক্রিকেট, ফুটবল, অ্যাথলিটেক্স-সহ যাবতীয় খেলা হয় এখানেই। সে মাঠেও হাত কেন?
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কাল, শুক্রবার থেকে তিন দিনের রাজ্য পর্যটন দফতরের ‘এক্সপিরিয়েন্স বেঙ্গল’ নামে একটি মেলা হওয়ার কথা। তার জন্যই যাবতীয় প্রস্তুতি। মাঠের মাঝখানে গর্ত করে বাঁশের কাঠামো দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। তৈরি হয়েছে এলইডি আলোর টাওয়ার। একটি খেলার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, একটি ক্লাবের কর্তা গৌতম মজুমদারের প্রশ্ন, “ওই মাঠে নিয়মিত খেলা হয়। সেখানে মেলা কেন, বুঝতে পারছি না। অন্য জায়গায় কি মেলা হত না?” কালীবাজারের একটি ক্লাবের কর্তা সমরজিৎ চৌধুরীও বলেন, “সবুজ বাঁচানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার চালাচ্ছেন। সেখানে মেলার নামে সবুজ ধ্বংস করা হচ্ছে।’’ লোকো দলের কোচ গৌতম সরকারও বলেন, “স্পন্দন মাঠে এ ভাবে মেলা মানা যায় না।’’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্স সচিব সুভাষ সাহার চিন্তা, ২ ফেব্রুয়ারি ওই মাঠে অ্যাথেলেটিক মিট রয়েছে। তার আগে মাঠ না ঠিক হলে খেলা বন্ধ করতে হবে। তাঁর কথায়, “মেলার জন্যে শিবির বন্ধ রাখতে হয়েছে। মেলা অন্যত্র হলেই ভাল হত।’’ ওই সংস্থার সম্পাদক পীরদাস মণ্ডলও বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাছে আপত্তির কথা জানিয়েছি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পর্যটন দফতর থেকে হঠাৎ করে মেলার দিন জানানো হয়। শহরের মেলার মাঠ বলে পরিচিত উৎসব ময়দানে হস্তশিল্প মেলা চলায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই মঙ্গলবার রাতে স্পন্দন কমপ্লেক্সে পর্যটন দফতরের মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা পরিকল্পনা উন্নয়ন আধিকারিক (ডিপিএলও) সৈকত হাজরা বলেন, “যে অবস্থায় মাঠ নিয়েছি, সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মাঠের কোনও ক্ষতি হবে না।’’