West Bengal Panchayat Election 2023

‘প্রতিরোধের’ পথেই দ্বিতীয়, দাবি বামের

আসনপ্রাপ্তির নিরিখে পূর্ব বর্ধমানে বিজেপিকে তিনে ঠেলে দুইয়ে উঠে এসেছে বামেরা। সিপিএম জিতেছে ২৬৭টি গ্রামসভা আসন। বিজেপি দু'শোর গন্ডিও পেরোয়নি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫৪
Share:

খণ্ডঘোষে হেরেও সিপিএমের উল্লাস। —নিজস্ব চিত্র।

ঘটনা ১: মঙ্গলবার রাত। একের পর এক আসনে তখন বিরোধীদের ভরাডুবির খবর মিলছে। ঠিক তখনই খণ্ডঘোষের নারায়ণপুরে সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বেঁধে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠল। সিপিএমের অভিযোগ, মানুষের রায় তাদের দলের প্রার্থীর পক্ষে গেলেও, তাঁকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ওই ঘটনায় তাদের তিন কর্মী জখম হয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

ঘটনা ২: বুধবার সকাল। ‘মানুষের রায়’ তাঁদের পক্ষে গিয়েছে দাবি করে লাল আবির মেখে নারায়ণপুরে কার্যত বিজয়োল্লাস করেন কয়েক জন সিপিএম কর্মী।

জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ভোটের ফলে হারলেও, এখন থেকে প্রতিরোধের পথেই যে বামেরা হাঁটবে, এই দুই ঘটনার মাধ্যমে সে বার্তাই দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আসনপ্রাপ্তির নিরিখে পূর্ব বর্ধমানে বিজেপিকে তিনে ঠেলে দুইয়ে উঠে এসেছে বামেরা। সিপিএম জিতেছে ২৬৭টি গ্রামসভা আসন। বিজেপি দু'শোর গন্ডিও পেরোয়নি। পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি বামেদের থেকে চারটি আসন বেশি পেয়েছে। জেলা পরিষদে অবশ্য তারা কেউই কোনও আসন পায়নি।

এ বার ৪,০১০টি গ্রামসভার আসনের মধ্যে সিপিএম একাই ২,৮১৯টিতে প্রার্থী দিয়েছিল। অনেক পিছনে থেকে বিজেপি প্রার্থী দিতে পেরেছিল ১,৮২৩টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতিতেও সিপিএমের প্রার্থী ছিল ৫১৫ জন। বিজেপি ৩৮৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। জেলা পরিষদে দু'পক্ষই সব আসনে লড়াই করেছে।

ভোটের ফল বলছে, গত পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এ বার বাম এবং বিজেপির ভোট বেড়েছে। বিরোধী পরিসর দখলে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোর টক্কর হয়েছে বিজেপির। রাজ্যে সার্বিক ভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও, পূর্ব বর্ধমানে কেন বিজেপি তৃতীয়? দলীয় সূত্রে এর নানা ব্যাখা মিলেছে। একটি হল, বিধানসভা ভোট-পরবর্তী ‘হিংসার’ ভীতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি দলের কর্মীরা। দ্বিতীয়ত, ভোট করানোর জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পরিকাঠামো নেই। তৃতীয়ত, দলে ‘দ্বন্দ্বের’ জেরে অনেক পুরনো কর্মী ভোটে 'নিষ্ক্রিয়' থেকেছেন। চতুর্থত, দলের একাংশের ‘গা-ছাড়া’ মনোভাব এবং বামেদের প্রতি তৃণমূলের একাংশের ‘সমর্থনে’ কিছুটা জমি ফিরে পেয়েছে তারা। বিজেপি নেতাদের একাংশ আবার দাবি করছেন, পঞ্চায়েতে লড়াই করলেও, তাদের চোখে ‘ফাইনাল’ লোকসভা ভোট। তাই কৌশলগত কারণে পঞ্চায়েত ভোটে কর্মীদের তৃণমূল ও পুলিশের ‘নজরের বাইরে’ রাখা হয়েছিল।

ফল আশানুরূপ না হলেও বিরোধী পরিসরে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠাকে ‘মন্দের ভাল’ বলে মনে করছে বামেরা। সিপিএমের দাবি, গত দু'বছর ধরে তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন হয়েছে। তাদের ‘প্রতিরোধ’ ভোটারদের মনে সাহস জুগিয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা দূরীকরণেও জোর দেওয়া হয়েছিল। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এটা ছিল প্রহসনের ভোট। তার মধ্যেও আমাদের সন্ত্রাসের প্রতিরোধ করতে দেখে ভোট দেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। এই প্রবণতা বাড়বে।’’

জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সন্ত্রাসের কথা তুলে ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করলে হবে না। আমরা প্রথম স্থানেই থাকব। বিরোধীরা দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্থানের জন্য লড়াই করুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement