পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।
খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হল পুলিশকে। রবিবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সোমাইপুর গ্রামের ঘটনা। গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে আউশগ্রাম থানার আইসি আবদুল রব খান এবং সেকেন্ড অফিসার এসআই উত্তম মণ্ডলকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় রাতে পূর্ব বর্ধমানের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বামচাঁদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আউশগ্রাম থানার আইসি ও সেকেন্ড অফিসারকে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নখকুনির যন্ত্রণার জন্য গ্রামেরই এক হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন সোমাইপুর লাইকিংপাড়ার বাসিন্দা সুমি সোরেন (৪৫)। বুধবার সকালে তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ বাড়ির কাছাকাছি মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। সেই থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এ নিয়ে দু’দিন আগে পুলিশের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এর পর রবিবার মৃতার ছেলে মিঠুন সোরেনকে পুলিশ আউশগ্রাম থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়। পুলিশের দাবি, জেরায় মিঠুন মাকে খুনের কথা কবুল করেন। এর পর রাত পৌনে ৮টা নাগাদ সোমাইপুর গ্রামে মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে যায় পুলিশ। ছিলেন আইসি আবদুর রব খান এবং সেকেন্ড অফিসার উত্তম পাল।
পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তকারীরা সোমাইপুর গ্রামের আদিবাসীপাড়ায় মিঠুনের বাড়িতে গেলে গন্ডগোল শুরু হয়। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। কারণ মৃতার ছেলে মিঠুন গ্রামে গিয়ে পাড়ার বাসিন্দাদের জানান, তাঁকে থানায় ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। এই কথা শুনে পাড়ার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরাও পুলিশের উপর চড়াও হন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম থানার আইসি, সেকেন্ড অফিসার-সহ আট জন পুলিশ কর্মী জখন হন। অন্য পুলিশকর্মীরা তাঁদের কোনও রকমে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে এলাকায় যায় আরও পুলিশবাহিনী।
জখম দুই পুলিশ অফিসারকে দেখতে রাতে বেসরকারি হাসপাতালে যান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। তিনি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে।
ডিএসপি (ডিএনটি) বীরেন্দ্র পাঠক বলেন, ‘‘মৃতার ছেলে মিঠুন পুলিশি জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর মায়ের সঙ্গে গ্রামের এক বাসিন্দার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই নিয়ে তাঁদের মধ্যে অশান্তি হয়। ছেলে মিঠুন এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি মাকে কোদাল দিয়ে আঘাত করে খুন করেছেন। পুলিশ মিঠুনকে নিয়ে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র কোদালটি উদ্ধারের জন্য বাড়িতে গিয়েছিল।’’