যন্ত্র নামিয়ে ভরাট করা হচ্ছে খাদান। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
তিন যুবকের মৃত্যুর ঘটনার পরে, কুলটির আলডিহিতে অবৈধ খনি ভরাটের কাজ শুরু করল ইসিএল। সোমবার সকাল থেকে সিআইএসএফ-কে সঙ্গে নিয়ে এই কাজ শুরু করেন খনির আধিকারিকেরা। শুক্রবারই জেলা প্রশাসনের তরফে ওই এলাকায় বেআইনি ভাবে চলা খাদান ভরাটের কথা জানানো হয়েছিল। খাদান ভরাটের পাশাপাশি ইসিএলের কর্তাদের আবেদন, কোথাও বেআইনি ভাবে কয়লা কাটার ঘটনা নজরে এলেই বাসিন্দারা যেন ‘খনন প্রহরী’ ‘অ্যাপ’-এর মাধ্যমে তা ইসিএল-কে জানান। যাঁরা এই খবর দেবেন তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও আশ্বাস তাঁদের।
১৩ অক্টোবর বিকেলে আলডিহির একটি খাদানে কয়লা কাটতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যান লাগোয়া আকনবাগান গ্রামের তিন যুবক। ১৭ অক্টোবর রাতে ওই খাদানের পাশে একটি বড় গর্ত খুঁড়ে তিন জনের দেহ উদ্ধার করে ‘এনডিআরএফ’-এর উদ্ধারকারী দল। এর পরেই আকনবাগান গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে আলডিহির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অবৈধ খাদানগুলি ভরাট করার দাবি জানান। যে খাদানে দুর্ঘটনা, পর দিন সকালেই সেটি ভরাট করার কথা জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম রায়। কিন্তু শুধু ওই একটি খাদানই ভরাটের আশ্বাসে খুশি ছিলেন না আকনবাগানের বাসিন্দারা। আশপাশের সমস্ত অবৈধ খাদান ভরাট করার দাবি তোলেন তাঁরা। গ্রামের মোড়ল সাগেন মারান্ডি বলেন, ‘‘আমরা চাই না, ভবিষ্যতে গ্রামের আর কেউ এ ভাবে খাদানে ঢুকে প্রাণ দিক। তাই এলাকার সমস্ত খাদান ভরাটের দাবি জানিয়েছি।’’
সোমবার সকাল থেকে এলাকার অবৈধ খাদানগুলি ভরাটের কাজ শুরু করেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সোদপুর এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যন্ত্র দিয়ে খাদান ভারাট করা হচ্ছে। তবে আলডিহির ঘটনার পরে ইসিএলের তরফে আরও পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান আধিকারিকেরা। অবৈধ খননের রমরমা রুখতে তাঁরা সাধারণ বাসিন্দাদের সাহায্য চেয়েছেন। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সংস্থার সদর দফতরে আয়োজিত ‘জিএম কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র বৈঠকে এ বিষয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেক এরিয়ার জিএম-কে বেশ কিছু কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থার সিএমডি প্রেমসাগর মিশ্র বলেন, ‘‘কয়লা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এর অপব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তা রুখতে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’ তিনি জানান, কোথায় কখন কী ভাবে অবৈধ খাদান চলছে তা ‘খনন প্রহরী’ নামে অ্যাপের মাধ্যমে ইসিএলের সাঁকতোড়িয়া সদর কার্যালয়ে জানাতে পারবেন বাসিন্দারা। তার সূত্র ধরে ব্যবস্থা নিতে পারবেন সংস্থার কর্তারা। সিএমডি জানান, এ ক্ষেত্রে যিনি খবর দিচ্ছেন তাঁর নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জুলাইয়ে এই ‘অ্যাপ’টি চালু করা হয়েছে। তার মাধ্যমে খবর পেয়ে বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে প্রচুর অবৈধ খাদান বন্ধও করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে কয়েকশো টন কয়লা।