ডিভিসি-র মাইথন জলাধার। নিজস্ব চিত্র।
আমন ধান রোপণ ও চাষের জন্য আজ, শুক্রবার থেকে জল ছাড়া হবে, জানিয়েছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। এর ফলে দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি ও হাওড়ায় আমন চাষে সুফল মিলবে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি ডিভিসি ও রাজ্য সরকারের আধিকারিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়।
চলতি বছরে বৃষ্টির অভাবে দক্ষিণবঙ্গের চাষাবাদ ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার লক্ষ্যেই বৈঠকটি হয় বলে জানা গিয়েছে। তার পরে, দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেশন কমিটি (ডিভিআরসি) ডিভিসি-কে সাধ্য মতো জল ছাড়ার অনুমতি দেয়।
ডিভিসির প্রজেক্ট হেড অঞ্জনিকুমার দুবে বলেন, “শুক্রবার থেকে আগামী সাত দিন প্রায় ৭০ হাজার একর ফুট জল ছাড়া হবে।” পাশাপাশি, ডিভিসি-র জন-সংযোগ দফতর জানিয়েছে, মাইথন জলাধারে জলের স্তর কম থাকায় এই জলাধার থেকে কম জল ছাড়া হবে। বেশি পরিমাণ জল ছাড়া হবে পাঞ্চেত থেকে। তবে কোন জলাধার থেকে কখন, কতটা জল ছাড়া হবে, তা পরে জলাধারের অবস্থা বিবেচনা করে ঠিক হবে বলে ডিভিসি জানিয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমানের মুখ্য কৃষি আধিকারিক সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জুলাই পর্যন্ত কম বৃষ্টির জন্য বীজতলা তৈরিতে সমস্যা দেখা গিয়েছে। ডিভিসি জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পাঁচ জেলার কৃষিকাজ খুবই উপকৃত হবে।” তাঁর সংযোজন: পশ্চিম বর্ধমানে জুলাইয়ে সাধারণত ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ বার এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই হাল পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলিতেও।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ফি বছর কম-বেশি ৬৯৩ মিলিয়ন ঘনমিটার জল ডিভিসির কাছ থেকে নেয়। এই জল মূলত সেচের কাজেই ব্যবহৃত হয়। ডিভিসি-র ছাড়া জলে ওই পাঁচ জেলার প্রায় সাড়ে আট লক্ষ হেক্টর জমিতে ফসল ফলানো হয়।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, এই জেলায় ৪০ থেকে ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর ধারেপাশে পৌঁছনো যায়নি। তবে কৃষি-কর্তাদের আশা, ডিভিসির ছাড়া জলে ও অগস্টে ভারী বর্ষা হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। সাগর বলেন, “জেলায় এখন বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের সাহায্যে অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় দ্রুত ধান রোপণ করানো হচ্ছে। ফলে জমিতে জলের পরিমাণ বাড়লে দ্রুত ধান রোপণ করা যাবে।”
পাশাপাশি, ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডেও এ বার বৃষ্টির খুবই কম হওয়ায় সে রাজ্যের নদীগুলি থেকে যে পরিমাণ জল ডিভিসি-র মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে ঢোকে, তা এ বার আসছে না। তাই সেচের জন্য পর্যাপ্ত জল ছাড়ার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একাধিক জলপ্রকল্প, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিল্প সংস্থায় জল সরবরাহের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হচ্ছে।