দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট।
প্রাক্তন কর্মীদের জন্য প্রায় আট বছর বাদে ফের ডিএসপির কোয়ার্টার লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল সেল। আপাতত ক্যাটিগরি ১ (৪০০ বর্গফুট) এবং ক্যাটিগরি ২ (৪৯৮-৬১৮ বর্গফুট) কোয়ার্টার লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার থেকে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে প্রয়োজন মতো সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়াতে কিছু আপত্তির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন কর্মীদের সংগঠন ‘স্টিল এমপ্লয়িজ় ফোরাম অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ কোয়ার্টারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। ডিএসপি-র নগর প্রশাসনিক ভবনের সামনে মার্চ পর্যন্ত টানা ১২০ দিন অবস্থান কর্মসূচি করেছিলেন সংস্থার প্রাক্তন কর্মীদের একাংশ। সিটু, আইএনটিইউসি, বিএমএস-সহ সাতটি শ্রমিক সংগঠন এক যোগে কোয়ার্টারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। আলাদা ভাবে আন্দোলন করেছে আইএনটিটিইউসি। শেষ পর্যন্ত সেল এই নির্দেশিকা প্রকাশ করায় কার্যত সবাই খুশি।
তবে, প্রাক্তন কর্মীদের একাংশ নির্দেশিকায় অখুশি। কারণ, প্রায় ১৭০০ প্রাক্তন কর্মী দীর্ঘদিন ধরে ক্যাটিগরি ৩, ৪ ও ৫ শ্রেণির কোয়ার্টারে থাকেন। ফলে লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় আবেদন করে কোয়ার্টার পেলে তাঁদের সেই কোয়ার্টার ছাড়তে হবে। সমস্যা আরও জটিল। কারণ, আবেদনের আগেই তাঁদের পুরনো কোয়ার্টার ছাড়তে হবে। তা হলে তাঁরা তখন যাবেন কোথায়? অথচ সেই কোয়ার্টারে নিজের অর্থ খরচ করে প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার এবং কিছু-কিছু ক্ষেত্রে সম্প্রসারণও করেছেন।
‘স্টিল এমপ্লয়িজ় ফোরাম অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র তরফে সুরেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনেক লড়াই করেছি। অবশেষে কর্তৃপক্ষ নির্দেশিকা জারি করেছে। কিন্তু নির্দেশিকার অনেক কিছু নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে।” ফোরামের দাবি, সব শ্রেণির কোয়ার্টার লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানানো হলেও, তা মানা হয়নি। যে পরিমাণ অর্থ জমা রাখার কথা বলা হয়েছে, তা-ও বেশি। জমে থাকা গ্র্যাচুইটির অর্থ সুদ-সহ ফেরতের দাবি থাকলেও, নির্দেশিকায় সে সম্পর্কে কোনওউল্লেখ নেই।
পাশাপাশি, সিটুর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডিএসপির কোয়ার্টার লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু হয়েছে। ত্রুটিগুলি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হবে।” একই কথা জানিয়েছেন ডিএসপির এআইটিইউসি নেতা শম্ভুচরণ প্রামাণিক, আইএনটিইউসি নেতা রজত দীক্ষিত প্রমুখ।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোয়ার্টারের সংখ্যা প্রায় ১৯১৪১টি। ১৯৯৯ সালে কোয়ার্টার লিজ় বা লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯৯ ও ২০০৮ সালে মোট ২৮৯৬ কোয়ার্টার লাইসেন্স বা লিজ় দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে ফের ৯১৩টি কোয়ার্টার লাইসেন্স দেওয়া হয়। ডিএসপির নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, লাইসেন্সের ভিত্তিতে প্রাক্তন কর্মীদের শুধুমাত্র ক্যাটিগরি ১ ও ২ কোয়ার্টার দেওয়া হবে। ক্যাটিগরি ১ কোয়ার্টারের জন্য দেড় লক্ষ এবং ক্যাটিগরি ২ কোয়ার্টারের জন্য চার লক্ষ টাকা ‘সিকিওরিটি মানি’ জমা দিতে হবে। ২০১৬-র ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা সবাই আবেদন করতে পারবেন। এখন কোয়ার্টারে বসবাস করেন যাঁরা এবং যাঁরা ২০২৩-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবসর নেবেন, তাঁরাও আবেদন করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
ক্যাটিগরি ১ ও ক্যাটিগরি ২-এর লাইসেন্স ফি যথাক্রমে মাসিক ১১০০ টাকা ও ১৫৫০ টাকা, জলের জন্য ৭২ টাকা এবং ৮২ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৩২ টাকা এবং ৩৮ টাকা দিতে হবে। বিদ্যুতের বিল যথাক্রমে এক হাজার ও দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। তবে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে রাজ্য সরকারের বিদ্যুতের দর অনুযায়ী ‘অ্যাডজাস্ট’ করা হবে। এ ছাড়া আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য দুই শ্রেণির ক্ষেত্রেই মাসে ৭০ টাকা করে দিতে হবে।