প্রতীকী ছবি।
রক্ষী হিসেবে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নিয়ম মেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পেয়েছে নতুন ঠিকা সংস্থা। কিন্তু, পুরনো ঠিকা সংস্থার রক্ষীরা কাজে পুনর্বহালের দাবিতে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের (আইওসিএল) দুর্গাপুর বটলিং প্ল্যান্টে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কয়েক দিন ধরে সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সিলিন্ডার সরবরাহ। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় এলপিজি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা আইওসিএল-এর।
লেনিন সরণির ধারের ওই প্ল্যান্টে দিনে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার সিলিন্ডার ‘লোড’ হয়। ফি দিন প্রায় ১৬০টি ট্রাক সিলিন্ডার নিয়ে যায় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ ও হুগলিতে। আইওসিএল সূত্রে জানা যায়, প্ল্যান্টে প্রথমে পুরনো ঠিকা সংস্থার ৪০ জন রক্ষী ছিলেন। পরে বয়সজনিত কারণে ছ’জন বাদ পড়লেও প্ল্যান্টের পাহারায় নিযুক্ত ছিলেন বাকিরা। কিন্তু পুরনো ঠিকা সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর। ১ জানুয়ারি থেকে নতুন ঠিকা সংস্থার দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও, কার্যত তা হয়নি।
কারণ, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকে কাজে পুনর্বহালের দাবিতে পুরনো ঠিকা সংস্থার রক্ষীরা সপরিবার ধর্না শুরু করেছেন। অবস্থানকারীদের দাবি, অতীতে ঠিকা সংস্থা বদলালেও তাঁদের কাজ যায়নি। কিন্তু দীর্ঘ দিনের এই ‘রীতি’তেই এ বার ব্যতিক্রম ঘটেছে। এর প্রতিবাদে ধর্না, বিক্ষোভের জেরে নতুন বছরের প্রথম দিন সকাল ৬টা থেকে প্ল্যান্টের সব কাজকর্ম বন্ধ। গাড়ি, কর্মী, ঠিকাকর্মী, আধিকারিকেরা প্ল্যান্টে ঢুকতে পারছেন না। শুধুমাত্র প্রতি পালিতে (শিফট্) দু’জন করে আধিকারিককে ঢুকতে দিচ্ছেন অবস্থানকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইওসিএল-এর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই অচলাবস্থা না কাটলে বিভিন্ন জেলায় গ্যাসের আকাল দেখা দেবে।’’
কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি? আইওসিএল সূত্রে জানা যায়, ডিরেক্টরেট জেনারেল রিসেটেলমেন্টের (ডিজিআর) নির্দেশিকা অনুযায়ী, সাধারণ রক্ষীদের বদলে পাহারার দায়িত্ব দিতে হবে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের। প্রাক্তন সেনাকর্মীদের মধ্য থেকেই অন্তত ৯০ শতাংশ নিয়োগ হতে হবে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা সেই নিয়ম মেনেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় সহকারী শ্রম কমিশনারের দফতর পুরনো রক্ষীদের সংগঠনকে চিঠি দিয়ে ডিজিআর নির্দেশিকার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি, ওই চিঠিতে পুরনো রক্ষীদের দাবিদাওয়ার কথা শ্রম মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘কয়েক দশক ধরে কাজ করার পরে এ ভাবে কাউকে বসিয়ে দেওয়া যায় না।’’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরনো রক্ষীরা বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই কাজ হারাতে রাজি নই আমরা। টানা আন্দোলন চলবে।’’