—নিজস্ব চিত্র।
দুর্গার চিরাচরিত মাটি বা খড়ের প্রতিমার বদলে অষ্টধাতুতে গড়া মূর্তি। মহিষাসুর বা দুর্গার চার সন্তান নেই। বরং মূর্তির দু’পাশে সখী জয়া-বিজয়া। দেবীর বাঁ-হাতে উদ্যত খড়্গ, ডান হাত উন্মুক্ত প্রসারিত। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামে বনেদি পরিবার হিসেবে পরিচিত মজুমদারদের বাড়িতে এ রূপেই দেখা যায় দুর্গাকে। তবে দুর্গার মূর্তির বদলে কাঁথেশ্বরীর পুজো হয় এ বাড়িতে। যা প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে মজুমদারদের দুর্গাপুজো অন্যতম।
মজুমদার পরিবারে কাঁথেশ্বরীর নামকরণের কাহিনিও অভিনব। পরিবারের প্রবীণ সদস্য দীপক মজুমদার জানিয়েছেন, একুশ প্রজন্ম আগে তাঁদের বংশের নরনাথ দাশশর্মা শ্রীখণ্ড গ্রামে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। তবে তাঁর আমলে কাঁথেশ্বরীর বদলে মৃন্ময়ী মূর্তির পুজো হত। নরনাথের পাঁচ প্রজন্ম পরে দুর্জয় দাশশর্মাই প্রথম অষ্টধাতুর মূর্তি তৈরি করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মাটির মন্দিরে।
দীপক বলেন, ‘‘দুর্জয় দাশশর্মা পুজো শুরুর কয়েক বছর পর গ্রামে নৈরাজ্য দেখা দেয়। লুঠতরাজ শুরু করে দস্যুরা। সে সময় দস্যুদের হাত থেকে পরিবারের ধনসম্পদ রক্ষা করার জন্য মন্দিরগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, আমাদের মন্দিরে হামলা করতে এসে কোনও দেবীমূর্তি দেখতে পায়নি দস্যুরা। মূর্তি গায়েব দেখে সকলেই ভেবে নেন, দস্যুরাই তা লুঠ করেছে। পরে স্বপ্নাদেশে জানা যায়, মন্দিরের মাটির দেওয়ালে অধিষ্ঠান করছেন দেবী। স্বপ্নাদেশ পেয়ে সে দেওয়াল ভেঙে দেবীমূর্তি বার করা হয়। ‘কাঁথ’ শব্দের অর্থ দেওয়াল। সেই সময় থেকেই এ পরিবারে দেবীর নামকরণ ‘কাঁথেশ্বরী’।’’
শ্রীখণ্ড গ্রামে চার দিন ধরে ধুমধাম করেই পুজোপাঠ চলে। পরিবারের আর এক সদস্যা শ্যামা মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের পদবী আসলে দাশশৰ্মা। উপাধি পেয়ে মজুমদার হয়েছি। তবে পদবী বদলালেও পুজোর পদ্ধতিতে এতটুকুও বদল ঘটেনি।’’