—প্রতীকী ছবি।
দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার ভাগীরথী ছেড়ে ডাঙায় উঠে এল কুমির। বিশেষজ্ঞদের দাবি, নদীর জল বাড়ায় নিজের এলাকায় থাকতে অসুবিধায় পড়ছে মিঠে জলের কুমিরেরা। সেই কারণেই অল্প জলে আরামে থাকতে পাড়ের দিকে উঠে আসছে। তার পরে পথভ্রষ্ট হয়ে পাড় লাগোয়া লোকালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ছে মগর প্রজাতির কুমির।
দেড় সপ্তাহ আগে কাটোয়ার কালিকাপুরে ইটভাটার কাছে কাশবনে একটি পুরুষ কুমিরকে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। রাতের আঁধারে ভাগীরথীর পাড় থেকে তিনশো মিটার দূরে ঢুকে পড়েছিল কুমিরটি। বন দফতর প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা পরে সেটিকে উদ্ধার করে ভাগীরথীতে ছেড়ে দেয়। সোমবার রাতে আবার কালনার জাপটের পালপাড়ায় দেখা মেলে একটি স্ত্রী কুমিরের। বন দফতরের দাবি, ভাগীরথীর পাড় থেকে প্রায় ২৫০ মিটার ভিতরে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল কুমিরটি। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ সেটিকে ধরা হয়। পরে ফরাক্কার মোহনায় সেটিকে ছেড়ে আসেন বন দফতরের কর্মীরা।
বন দফতর ও কুমির বিশেষজ্ঞদের দাবি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডে গঙ্গায় ও ফরাক্কার কাছে পদ্মায় মগর প্রজাতির কুমির দেখা যায়। রোদ পেতে নদীর চরে অথবা পাড়ে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় তাদের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নদীর জল বাড়ায় কুমিরগুলি ডাঙার দিকে চলে আসতে পারে। আবার একই জায়গায় অনেকগুলি কুমির হয়ে যাওয়ার ফলে খাবারের খোঁজেও একই নদী দিয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে পারে তারা। গুজরাত বা সুন্দরবনে লোকালয়ে কুমির ঢুকে পড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে দু’সপ্তাহের ভিতরে পরপর দু’জায়গায় লোকালয়ে কুমির ঢুকে পড়াটা উদ্বেগের বটেই। বন দফতরের কর্তাদের দাবি, অন্তত আরও দু’টি কুমির কাটোয়া-কালনা ভাগীরথীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাক্তন মুখ্য বনপাল কল্যাণ দাস মনে করেন, “হঠাৎ করে জল বেড়ে গেলে মিঠে জলের কুমির ডাঙায় উঠে আসে। আবার ডিম পাড়ার জন্যও ডাঙায় উঠে আসে। নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে যাওয়ার পরে সম্ভবত পথ হারিয়ে ফেলেছে কুমিরগুলি।’’ জেলা বনাধিকারিক আধিকারিক (ডিএফও) নিশা গোস্বামীও একই দাবি করেন। তাঁর কথায়, “সবাই চায় তাদের বাসস্থান নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকুক। জল বাড়ায় গতি বেড়েছে। নিজের এলাকায় থাকতে কুমিরেরও অসুবিধা হচ্ছে। সে জন্যই জলের গতি কম রয়েছে এমন জায়গা খুঁজতে ডাঙার দিকে চলে আসছে।”
এ বঙ্গের কুমির বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরীর মতে, মিঠে জলের কুমিরের লোকালয়ের ভিতরে আসা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। গুজরাত বা সুন্দরবনে এই ছবি দেখা যায়। গত চার-পাঁচ বছর ধরে ভাগীরথীতে কুমির দেখা যাচ্ছে। তাঁর মতে, “চারদিক নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার পরেই কুমির নিশ্চিন্তে থাকার জন্য ডাঙার দিকে উঠে আসছে। তারপরেই পথ হারিয়ে ফেলছে।’’
এই দু’টি কুমির ধরা পড়ার আগে কাটোয়ার ভাগীরথীর কাছেও একটি ঘড়িয়াল ধরা পড়েছিল। কোনও ক্ষেত্রেই বিশাল আকারের সরীসৃপকে উক্ত্যক্ত করতে দেখা যায়নি। এডিএফও সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “মানুষের মনে সচেতনতা এসেছে। তবে আরও প্রচার বাড়াতে হবে।”
বিশেষজ্ঞরা জানান, চম্বল অববাহিকার ৪০ থেকে ৫০ ফুট দূরত্বে গিয়ে কুমিরকে ডিম পাড়তে দেখা গিয়েছে। এখানেও সেই কারণে ঢুকতে পারে কুমিরটি। পশু, পাখি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চর্চা করছেন কালনার উপ সংশোধনাগারের জেলর অর্পণজ্যোতি চক্রবর্তী। তিনিও বলেন, ‘‘এই সময়টা কুমিরের প্রজনন কাল। ডিম পাড়ার জন্য মেয়ে কুমিরটি জায়গা খুঁজতে পালপাড়া এলাকায় ঢুকে পড়েছিল বলে মনে হচ্ছে। আমার ধারণা ভাগীরথীতে আরও কুমির রয়েছে।’’