Water Tank Collapse

বার বার দুর্ঘটনা, তবু হুঁশ ফেরেনি

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি শীতের রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বর্ধমান স্টেশনের ঝুল বারান্দার একাংশ। ১৯০৫ সালে তৈরি ওই ঝুল বারান্দা ভেঙে এক জনের মৃত্যু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৩
Share:

ভেঙে পড়েছে জলের ট্যাঙ্ক। —ফাইল চিত্র।

পুরনো স্টেশনে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন নানা নির্মাণ। আর সে সব নির্মাণে পর পর বিপত্তি ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে রেলের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। বছর চারেক আগে ঝুল বারান্দা ভেঙে পড়ার পরে বুধবার ভাঙল ১৩৩ বছরের পুরনো জলের ট্যাঙ্কের দেওয়াল। মৃত্যু হল তিন জনের। প্রশ্ন উঠল রেলের যাত্রীসুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এ দিন বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে থাকা বিশাল জলাধারটি ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ নানা পক্ষের। এলাকার বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার দাবি, তিনি রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মৃতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন এবং ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন।

Advertisement

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি শীতের রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বর্ধমান স্টেশনের ঝুল বারান্দার একাংশ। ১৯০৫ সালে তৈরি ওই ঝুল বারান্দা ভেঙে এক জনের মৃত্যু হয়। এ বার তার চেয়েও পুরনো, ১৮৯০ সালের জলাধারটির দেওয়ালের দু’দিকে থাকা লোহার চাদর ভেঙে পড়ে যাত্রী-ছাউনির উপরে। সেই টিনের ছাউনির একটি দিক ভেঙে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় আহত স্বপ্না পণ্ডিতের কথায়, ‘‘সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো জল আছড়ে পড়ল! আমরা দু’তিন জন ছিটকে পড়লাম লাইনের উপরে। আমাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ হারিয়ে গিয়েছে।’’ খবর পেয়েই স্টেশনে আসেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার আমনদীপ ও জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘সাড়ে ১২টা নাগাদ খবর পাই, জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়েছে। কয়েক জন চাপা পড়ে রয়েছেন। জানা গিয়েছে, তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন এই দুর্ঘটনা, খতিয়ে দেখছে রেল।’’

ঘটনার পরে স্টেশনে পৌঁছে বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাস অভিযোগ করেন, “এই জলাধারের ভিতরে মরচে পড়ে গিয়েছে। বাইরেটা চকচকে করা রয়েছে। এর আগে ঝুল বারান্দা ভেঙে পড়ল। রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যাপার নেই।” বিকেলে বর্ধমান হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক (কাটোয়া) রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা যাত্রী স্রেফ রেলের গাফিলতিতে মারা যাবেন, এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না! সেটাই হয়েছে। বর্ধমান স্টেশনে আগের দুর্ঘটনার পরেও কোনও হুঁশ ফেরেনি, তা প্রমাণিত। যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা আর মুখে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে।”

Advertisement

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, “বর্ধমানে আগের দুর্ঘটনার পরেই রেলকে রক্ষণাবেক্ষণের উপরে নজর দিতে বলেছিলাম। জলাধার ভেঙে পড়ায় বোঝাই যাচ্ছে, রেল কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় সরকার কতটা উদাসীন!” প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য গৌরব সমাদ্দারের অভিযোগ, “লাইনের যেমন রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে দুর্ঘটনা ঘটে, তেমনই জলাধারেও যে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না, তা প্রমাণ হয়ে গেল। এই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাত্রীদের জীবনের কোনও মূল্য নেই।”

রেলের তরফে অবশ্য রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ মানা হয়নি। তাদের দাবি, বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। গত ২ ডিসেম্বরই জলাধারটি পরিষ্কার করা হয়েছিল।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, “তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারও দোষে এই ঘটনা ঘটে থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এ দিন দাবি করেন, “রেল ক্ষতিপূরণের দাবি মেনে নিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আছে কি না, তা তদন্তের পরেই জানা যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement