শহরও প্রাচীন, পানীয় জলের সরবরাহও মান্ধাতা আমলের।
কোনও দিন পানীয় জেলর পাইপ লাইনে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরচে পড়ার অভিযোগ উঠছে, কোনও দিন তা ফুটো হয়ে জল না মেলার অভিযোগ করছেন বসিন্দারা। আবার ফুটো দিয়ে নোংরা জলও ঢুকছে পানীয় জলের পাইপে। সেটাই পৌঁছএ যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি, রাস্তার কলে। উপায় না থাকায় সেই দূষিত জলই পান করছেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের একাংশ।
এ রকমই নানা অভিযোগ নিয়ে প্রায়দিনই পুরসভায় গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। রবিবার দুপুরে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে পুরসভার ডাকা নাগরিক অধিবেশনেও পানীয় জলের দুরবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন বাসিন্দারা। এর আগে পুরপ্রধানের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকেও শহরের কয়েকজন বর্ধমান পুরসভার সরবরাহ করা জলকে আদৌ ‘পানীয়’ বলা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে নাগরিকদের অভিযোগ সম্ভবত খুব বেশি বছর পুরসভাকে শুনতে হবে না। শুক্রবার প্রশাসনিক সভার শেষে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “সেপ্টেম্বর থেকে বর্ধমান শহরে নতুন পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।”
পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত প্রকাশ্যে ‘পানীয় জল কোনওভাবেই দূষিত নয়’ বলে ধামাচাপা দিতে চাইলেও পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মহম্মদ সেলিম রাখঢাক না করে সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “জল সরবরাহের পাইপগুলি বহু পুরনো। ফলে বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মধ্যেই পাইপ ফুটো হয়ে নর্দমার জল ঢুকে পড়ে। আমাদের নজরে এলেই পাইপ সংস্কার করা হয়।’’
পুরসভা সূত্রেই জানা যায়, শহরের রসিকপুর, লক্ষ্মীপুর মাঠ, জোড়া মন্দির, বাবুরবাগ, বাহির সর্বমঙ্গলাপাড়া, সুভাষপল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকার জল নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের দাবি, কোথাও পানীয় জল সুতোর মতো পড়ে, কোথাও প্রায়ই মেলে অপরিষ্কার জল। আবার জল পাত্রে রাখার পরে তলায় নোংরা জমে যায় বলেও তাঁদের দাবি। বাসিন্দারা জানান, এ ব্যাপারে পুরসভায় অনেকবার অভিযোগ করা হলেও সুরাহা হয়নি। জল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর জানান, লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় পাইপলাইন ফুটো হয়ে নর্দমার জল ঢুকছে বলে পুরসভায় খবর এসেছিল। তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছিলেন, নর্দমার নীচ দিয়ে হাজার ফুট জলের পাইপ লাইন গিয়েছে। সেখানেই পাইপ লাইন ফুটো হয়ে যাওয়ায় নোংরা জল মিশছে। নাগরিক অধিবেশনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়ন্তকুমার পাঁজাও বলেন, ‘‘পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয় না। ফলে, বাসিন্দাদের পেটের রোগ লেগেই রয়েছে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মী তুষারকান্তি বেরের আবার অভিযোগ, “জল পরিস্রুত করার কোনও ব্যবস্থাই পুরসভার নেই।”
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আমরুত’ (অটল মিশন ফর রেজুভেনেশন আরবান ট্রান্সফর্মেশন) প্রকল্পে দামোদরের পলিস্তর থেকে জল তুলে পরিশোধন করে শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডেই সরবরাহ করা হবে। ৩০১ কোটি টাকা এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন মিলেছে। তার মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা পুরসভা পেয়েও গিয়েছে। পুরপিতা পরিষদের সদস্য (পূর্ত) খোকন দাস জানান, আমরুত প্রকল্পে শহর লাগোয়া ইদিলপুরের কাছে কাঠগোলা ঘাটে দামোদরের পলিস্তর থেকে জল তোলা হবে। সেই জল পরিস্রুত করা হবে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের লাকুর্ডি জল কলের মাঠে। সেখান থেকে লাকুর্ডি, ষাঁড়খানা গলি, সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কাছে গড়গড়া ঘাট, নতুনগঞ্জ, তিনকোনিয়া, খালাসিপাড়া, খাগড়াগড়, গোদা, বেচারহাট, কানাইনাটশাল—মোট দশটি জায়গায় উচ্চ জলাধারে জল পাঠানো হবে। জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জোনে ভাগ করে শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডেই জল সরবরাহ করা হবে। প্রতিদিন ১৩ মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের জন্য শহরের ভিতরের ২৬ কিলোমিটারেরও বেশি পুরনো পাইপ লাইন তুলে নতুন পাইপও বসানো হবে।