বর্ধমান ১ ব্লকের কুড়মুনে বিজেপির সভা। নিজস্ব চিত্র।
মঞ্চের দু’দিকে বাঁশ আর কাপড় দিয়ে জায়গা ঘেরা ছিল। সভা শুরুর আগেই দেখা গেল, কাপড় খুলে লোকজন ঢুকে গিয়েছেন ঘেরা জায়গায়। আবার মঞ্চের আর এক পাশে মাইক বাঁধার বাঁশের খুঁটিতেও চড়ে বসেছিলেন কয়েকজন। দৃশ্য দেখে মঞ্চ থেকে মাইকে বিপদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁদের নেমে পড়ার কথা বলা হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বক্তব্যের শুরুতেই দাবি করেন, “পর্দা দিয়ে ঘেরা ছিল জায়গাটা। লোকের চাপে তা খুলে দিতে হচ্ছে। এখন যে মাঠেই সভা করা হোক না কেন, তা ছোট হচ্ছে।’’ মঙ্গলবার বিকেলে বর্ধমান ১ ব্লকের কুড়মুন গ্রামের হাটতলায় ওই সভামঞ্চে বর্ধমান পুরসভার তৃণমূলের এক কাউন্সিলরকে দেখা যায়। যদিও তা নিয়ে দু’পক্ষই কিছু বলতে চাননি।
দেওয়ানদিঘি মোড় থেকে ভাতার বিধানসভার এই এলাকা বিজেপির পতাকায় মোড়া ছিল। তৃণমূলের পতাকাও দেখা গিয়েছে। বিজেপির নেতা কল্লোল নন্দনের অভিযোগ, বর্ধমান শহর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তৃণমূল বিজেপির পতাকা, ফ্লেক্স ছিঁড়ে দিয়েছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। এ দিন বেলা সওয়া ১টা নাগাদ বর্ধমান শহরে উল্লাসে আসেন দিলীপবাবু। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে ঘণ্টাখানেকের উপরে একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠক নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাননি।
এ দিন সভায় ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। জনসভায় লোক দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, “এই এলাকার ২১টি বুথের মধ্যে আটটিতে জিতেছিলাম। বাকিগুলিতে আট-ন’টি করে ভোট পেয়েছি। এই মাঠ বলে দিচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সেই ফল উল্টে যাবে।’’ বিজেপির হিসেবে ১৫ হাজার লোক হয়েছিল মাঠে। যদিও পুলিশের একটা সূত্রের দাবি, হাজার পাঁচেক লোক হয়েছিল। এ দিন সুনীল মণ্ডলও বলেন, ‘‘ওঁরা (তৃণমূল) যাত্রা করছেন। আর আমরা ধ্বনি দিয়েছি। তাতেই কাঁপুনি ধরে গিয়েছে। আমরা চাই, কেন্দ্রে ও রাজ্যে এক সরকার থাকুক।” বর্ধমান পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলরের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেকেই যোগ দিতে চাইছেন। পরিস্থিতির কথা ভেবে একটু ধীরে খেলছি।’’
এ দিন রাজ্যে কৃষকদের দুর্দশা নিয়ে সরব হন দিলীপবাবু। কেন্দ্রের কিসান নিধি প্রকল্প থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, “কেন্দ্র সরকার সহায়কমূল্য ঠিক করেছে। সে টাকায় ধান বিক্রি হচ্ছে না। অন্তত ৫০০-৬০০ টাকা কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। দালাল-কাটমানিতে ওই টাকা চলে যাচ্ছে। আলু ওঠার সময়ে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। অথচ, বাজারে ৪৫ টাকা কেজিতে আলু কিনতে হয়েছে।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোট হবে না বলেও কর্মী-সমর্থকদের আশ্বস্ত করেন তিনি। তাঁর দাবি, “বুথ থেকে একশো মিটার দূরে রাজ্য পুলিশ থাকবে। আর বুথ লুট করতে এলে, হাত-পা ভাঙবে। এটা এলাকায় প্রচার করতে হবে।’’