প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাটা পশ্চিম বর্ধমানে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত সংখ্যাটা ২৩৪। এই অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা জানিয়েছে দফতর। আসানসোল জেলা হাসপাতাল, আটটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জেলার দু’টি পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে দরকারি কিছু নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদ ইউনুস। পাশাপাশি, আসানসোল পুরসভা অঞ্চলের সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিএমওএইচ।
সম্প্রতি কাঁকসায় এক নাবালিকার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই তৎপরতা বাড়িয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অবস্থা উদ্বেগজনক নয় জানিয়েও সতর্কতায় যাতে গাফিলতি না থাকে, সে বিষয়ে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। সিএমওএইচ বলেন, “শনিবার বিকেল পর্যন্ত ২৩৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মিলেছে। কাঁকসার নাবালিকা যে অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল, সে এলাকা-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।” স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, জেলার আটটি ব্লক ও পুরসভা এলাকায় আশাকর্মীরা এলাকা ভাগ করে প্রতি দু’দিন অন্তর বাড়ি-বাড়ি পর্যবেক্ষণ করছেন। জেলা হাসপাতাল, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পুরসভার স্বাস্থ্য-কর্তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কোনও রোগী তিন দিনের বেশি জ্বরে আক্রান্ত থাকলে, তাঁর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ডেঙ্গির সংক্রমণ ঘটেছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
পাশাপাশি, ব্লক আধিকারিক এবং দু’টি পুরসভার কর্তৃপক্ষকে এলাকায় সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিএমওএইচ বলেন, “দুর্গাপুর পুর-এলাকার পরিস্থিতি তুলনামূলক অনেকটাই ভাল। কিন্তু চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে আসানসোল পুর-এলাকা। বিশেষত, ৭৩, ৮৫ ও ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা উদ্বেগজনক। তাই আসানসোল পুরসভাকে বাড়তি তৎপরতার সঙ্গে, সাফাই ও নিকাশির উপরে জোর দিতে বলেছি।”
পরিসংখ্যানেও আসানসোল নিয়ে চিন্তার কথা জানা যাচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব, এ পর্যন্ত আসানসোল পুর-এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে। গত জুনে ১৯টি ওয়ার্ডকে ‘ডেঙ্গি-সংবেদনশীল’ ঘোষণা করে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা জানিয়েছিল আসানসোল পুরসভা। কিন্তু তার পরেও কেন এই হাল, তা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির তোপ, “শহরের সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে গিয়েছে। আসানসোলের এসবি গড়াই রোড, কল্যাণপুর, রেলপাড়, ধাদকা, বরাকর সর্বত্রই খারাপ পরিস্থিতি। পুরসভার এ সবে কোনও নজর নেই।” পুরসভার কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা গোলাম সরওয়ারও বলেন, “বরাকরে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড গত প্রায় দেড় মাস ধরে জলমগ্ন। ফলে, ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়বে, এটা আশ্চর্যের কিছু নয়।”
যদিও, বিরোধীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শহরের কোথাও-কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে আবর্জনা থাকা নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করা ঠিক নয়। পুরসভার স্থায়ী ও অস্থায়ী নিয়ে প্রায় ৩,৫০০ জন সাফাইকর্মী নিরন্তর কাজ করছেন। বর্ষায় নিচু এলাকায় জল জমার সমস্যা রয়েছে। তা দ্রুত বার করা হচ্ছে।” পুরসভা জানিয়েছে, ডেঙ্গি-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ১০৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে প্রায় ৯৩৭টি দল। প্রতিটি দলে তিন জন করে সদস্য আছেন। পুরসভার আধিকারিক পর্যায়ের ৪২ জনকে নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা এলাকায় আচমকা পরিদর্শন করে সাফাই, নিকাশি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের পর্যবেক্ষণ করছেন। বিধান বলেন, “সচেতনতা প্রচারও চলছে। ডেঙ্গি রুখতে সাধারণ নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। সেই প্রক্রিয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।”