ধান কাটতে-কাটতেই কথাবার্তা। দেবশালায়। নিজস্ব চিত্র।
ঠা-ঠা রোদ সবে উঠতে শুরু করেছে। কৃষিপ্রধান গ্রামের সবাই প্রায় তখন খেতে। আচমকা, খবর এল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, নতুন তিনটি কৃষি আইন বাতিল করা হয়েছে! মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদের দেবশালা গ্রামের ছবিটা। চাষি, চাষির পরিবারে যেন খুশির হাওয়া। খেতের আলে, পাড়ার চায়ের দোকানে জমল জটলা। গরম চা আর সকালের মুড়ির সঙ্গে শুরু হল বিষয়টি নিয়ে চর্চা। সঙ্গে রইল প্রশ্নও, এই ঘোষণায় এত দেরি হল কেন।
জঙ্গলে ঘেরা দেবশালা গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বাস। বেশির ভাগ পরিবারই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। মূল উৎপাদিত ফসল, ধান। বছরভর হয় আনাজ চাষও। কৃষি আইন বিল আকারে থাকার সময় থেকেই বিষয়টি নিয়ে এই গ্রামের বাসিন্দাদের কৌতূহল ছিল চোখে পড়ার মতো।
গ্রামেরই বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া চায়ের দোকানে এ দিন ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় চাষি অমর মুখোপাধ্যায়, নারান গড়াই প্রমুখ। তাঁরা বলেন, “এই আইন বাস্তবায়িত হলে, দেশের কৃষি অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠত কয়েকটি বড় বেসরকারি সংস্থা। তাতে কৃষকের স্বার্থ কতটা রক্ষিত হত, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। যা হল, খুব ভাল হয়েছে।” তাঁদের মতে, চাষির স্বার্থেই কৃষিজ পণ্যের দাম ও বিক্রির উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণটা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
গ্রামের পোদ্দারপাড়ার দুর্গা মন্দিরের রোয়াকে বসেছিলেন কয়েকজন গ্রামবাসী। তাঁদের আলোচনাতেও কৃষি আইন। তাঁদের মতে, এই আইনের একটি দিক ছিল, বেসরকারি সংস্থাগুলি কোনও ঊর্ধ্বসীমা ছাড়া, কৃষিপণ্য মজুত করতে পারবে। ওই আড্ডায় থাকা আশিস সাহা, সুরেশ মণ্ডলদের মতো চাষিরা বলেন, “এর ফলে, গরিব মানুষের বিপদে পড়ার আশঙ্কা ছিল।”
পাশাপাশি, এখন ধান কাটার মরসুম চলছে। দেবশালায় গিয়ে দেখা গেল, যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটছেন চাষিরা। মাঠের আলে দাঁড়িয়ে অমল বক্সী, সোমনাথ বক্সীরা জানান, চাষে যে ভাবে দিন-দিন খরচ বাড়ছে, তাতে কৃষকেরা খুবই সমস্যায় পড়ছেন। ওই আইন অনুযায়ী, নিজেদের উৎপাদিত ফসলের দরাদরি করার সুযোগ ছিল না চাষিদের। ফলে, চাষিদের আখেরে ক্ষতিই হত। কৃষি আইন বাতিল করার সিদ্ধান্তকে তাঁরা সর্বান্তকরণে সমর্থন করছেন জানান অমলরা। তবে কাজে ফেরার আগে তাঁদের প্রশ্ন, “আইন প্রত্যাহার যখন করাই হল, এত দেরিতে তা হল কেন? বহু চাষির মৃত্যু, দিল্লির সীমানায় শীত-বর্ষায় বহু মানুষের অসুস্থ হওয়ার দায় কে নেবে?”
চাষিদের গ্রামে খুশির সঙ্গে আপাতত, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।