DA Case

স্যরেদের কর্মবিরতি, ক্লাস নিল ছাত্রছাত্রীরা

মঙ্গলবার সকালে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল খোলা। তবে গেটের ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল, ঝুলছে পোস্টার। সেখানে নীল কালিতে বড় বড় করে হাতে লেখা ‘কর্মবিরতি’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৯
Share:

এমনই দৃশ্য দেখা গেল দুর্গাপুরের নডিহা হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র

ডিএ-র দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কর্মবিরতি পালন করছেন। পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে ‘সিনিয়র ক্লাসে’র ছাত্র-ছাত্রীরা। ক্লাস নিচ্ছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি, সদস্যও! মঙ্গলবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল দুর্গাপুরের নডিহা হাইস্কুলে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল খোলা। তবে গেটের ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল, ঝুলছে পোস্টার। সেখানে নীল কালিতে বড় বড় করে হাতে লেখা ‘কর্মবিরতি’। শিক্ষকেরা গল্পগুজব করছেন। এ দিকে, ক্লাসঘরে পড়ুয়ারা কেউ আড্ডা মশগুল, কেউ গান গাইছে, কেউ ঘুমোচ্ছে! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, “পরের বছর আমাদের মাধ্যমিক। এমন কর্মবিরতিতে আমাদের পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণকুমার মাজি অবশ্য বলেন, “ছেলেমেয়েরা আমাদের সন্তানের মতো। তাদের কথা ভেবে সব আয়োজন তৈরি করে রেখেছি। ক্লাস যে আমরা একেবারেই নিচ্ছি না, তা নয়। পড়ুয়াদের সঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে অন্য দিনে যে ভাবে হয়, তারথেকে আলাদা।”

Advertisement

তবে ‘অন্য দিনের’ মতোই ক্লাস হয়েছে। শুধু মাস্টারমশাইয়েরা বদলে গিয়েছেন। দশম শ্রেণির ছাত্রী দীপ্তি সরকারের অভিজ্ঞতা, প্রথম পিরিয়ডে শিক্ষক এসেছিসেন। তার পরে তাদের পড়িয়েছে একাদশ শ্রেণির দিদিরা। দীপ্তিরা আবার অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে পড়িয়ে এসেছে। একাদশ শ্রেণির ছাত্র অর্পণ মণ্ডল আবার বলে, “কী একটা পেন ডাউন চলছে! স্যর ক্লাসে আসেননি। দু’দিন ধরে এমন চলছে।” তবে ওই ছাত্রছাত্রীরা জানাচ্ছে, স্কুলে তাদের এ ভাবে ক্লাস নেওয়ার ঘটনা প্রথম নয়। আগেও তারা এ ভাবে ক্লাস নিয়েছে। তবে তা হয়েছে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে। দু’দিন ধরে ক্লাস হচ্ছে না দেখে, তাই পড়াশোনা সামাল দিতেই এমনটা করেছে তারা।

স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং সমিতির সদস্য সনৎ রায় ক্লাস নিয়েছেন। অঞ্জন বলেন, “আমি শিক্ষক নই। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে ক্লাস নিয়েছি। এ ভাবে কর্মবিরতি না করার জন্য প্রধান শিক্ষক বাকিদের বলেছিলেন। তাঁরা শোনেননি।” তাঁর সংযোজন: “বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের পাঠিয়েছেন পড়াশোনার জন্য।” তবে বিষয়টি নিয়ে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমস্বরে বলেন, “সারা রাজ্যেই কর্মবিরতি চলছে।” রাজ্য সরকার কর্মবিরতির বিরোধিতা করলেও তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সদস্যেরাও এই কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন বলে শিক্ষকদের একাংশের দাবি। নিজেকে ওই সংগঠনের সদস্য দাবি করে, শিক্ষক পল দাস বলেন, “ডিএ কে না চান বলুন! তবে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি আমরা ক্লাসে যাচ্ছি। কথা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে।” দু’দিন ধরে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ায় পড়ুয়াদের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। পাশাপাশি, তাঁর বক্তব্য, “আমরা পড়ুয়াদের পাশে আছি। দু’টো দিনে যাতে পড়াশোনায় ‘খামতি’ না হয়, তা দেখছি। দাবি পূরণে প্রতীকী কর্মবিরতিও পালন করছি।”

তবে এই স্কুলের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। বাম প্রভাবিত ‘নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ বলেন, “আমাদের সংগঠন থেকে বলা হয়েছিল, স্কুলে শিক্ষকেরা বুকে দাবি-সনদ এঁটে আন্দোলনে শামিল হবেন। তবে স্বাভাবিক পঠনপাঠন চলবে। স্কুলে কর্মবিরতির কথা বলা হয়নি।” আসানসোল জেলা বিজেপি টিচার্স সেলের আহ্বায়ক বিকাশ বিশ্বাস বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকার দায়ী। ৩৮টি অরাজনৈতিক সংগঠন ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করছে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরাও যোগ দিয়েছেন সে আন্দোলনে। শাসক দলের সংগঠনকেও আটকাতে পারছে না রাজ্য সরকার!” যদিও, তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “ছুটি নিয়ে আন্দোলন করলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু স্কুলে উপস্থিত হয়ে ক্লাস না নিলে শিক্ষার অধিকার আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। এটা কখনই সমর্থন করা যায় না। নিশ্চয়ই, ডিএ সবার দরকার। কিন্তু নিজেদের স্বার্থপূরণ করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি করা, এটা মানা যায় না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement