Cyclone Amphan in West Bengal

আবেদনের ৬৭ শতাংশই ভুয়ো, বলছে প্রশাসন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো দ্বিতীয় দফায় আমপানের ক্ষতিগ্রস্তদের সংশোধিত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেমারি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০২:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

আবেদনকারীর সংখ্যা চোদ্দোশোর বেশি। কিন্তু তার বেশির ভাগই ভুয়ো! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো দ্বিতীয় দফায় আমপানের ক্ষতিগ্রস্তদের সংশোধিত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের। আবেদন খতিয়ে দেখতে গিয়ে অনেক আবেদনকারীকেই ‘খুঁজে’ পাননি তাঁরা। আবার পাকা দোতলা বাড়ির মালিক আবেদনকারী, এমনটাও মিলেছে।

Advertisement

প্রশাসনের নিয়মে যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা করে পাবেন। আর যাঁদের আংশিক ক্ষতি হয়েছে তাঁরা বাড়ি সংস্কার করার জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে পাবেন। গত ৬ ও ৭ অগস্ট সংশোধিত তালিকা তৈরির জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আবেদন জমা নিয়েছিল প্রশাসন। আবেদন খতিয়ে দেখার জন্য প্রতিটি ব্লক ও পুরসভায় ডব্লুবিসিএস পদমর্যাদার আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে ওই দু’দিনে সব মিলিয়ে ৫,৩১৪টি আবেদন জমা পড়েছিল। শুক্রবার তালিকা বার হওয়ার পরে দেখা যায়, মাত্র ২৯৭টি বাড়ির সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১,৪৯৪টি বাড়ির। আবেদনের ৬৭ শতাংশই ‘ভুয়ো’ বলে বাতিল করে দিয়েছেন আধিকারিকরা।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “দ্বিতীয় দফায় আবেদন গ্রহণ করে খতিয়ে দেখার পরে ব্লক, মহকুমাশাসক ও জেলাশাসক দফতরে প্রকাশ্যে তালিকা টাঙানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২৯৭টি বাড়ির, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১,৪৯৪টি বাড়ির। এর জন্যে ১,৩৪,১০,০০০ টাকার প্রয়োজন।’’

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি, ১,৪১১টি আবেদন জমা পড়েছিল মেমারি ১ ব্লক থেকে। তার মধ্যেও মোট আবেদনকারীর অর্ধেকের বেশি ছিলেন নিমো ২ পঞ্চায়েতের। সরেজমিন তদন্ত করতে গিয়ে আধিকারিকেরা চমকে যান। নিমো ২ পঞ্চায়েত থেকে যাঁরা আবেদন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশের অস্তিত্বই খুঁজে পাননি আধিকারিকেরা। মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যের দাবি, “ওই সব ফর্মে যে ঠিকানা বা ফোন নম্বর দিয়ে আবেদন করা হয়েছিল, তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ বাড়িরই কোনও ক্ষতি হয়নি। আবার পাকা বাড়ির মালিকও আবেদন করেছিলেন।’’ এমনই এক পাকা বাড়ির মালিকের কথায়, “বাড়ি লাগোয়া গোয়াল ঘরের সামনের টালি চাল ভেঙে গিয়েছিল। তাই আবেদন করেছিলাম।’’

প্রশাসনের কর্তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী, মাসিক আড়াই হাজার টাকা আয় এবং শুধু ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এ ক্ষতিগ্রস্তদেরই আবেদন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমপানের পরেও জেলায় যে ঝড় হয় তাতে ক্ষতি হয়েছে এমন লোকেরাও ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন। তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে।

আমপানের প্রায় আড়াই মাস পর ‘ক্ষতিগ্রস্ত’দের চিহ্নিত করা হল কী ভাবে? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “বেশ কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তেরা অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন কিংবা ত্রিপল টাঙিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। আবার অনেকে ধার-দেনা করে বাড়ি সারিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সাক্ষ্যের উপরে নির্ভর করতে হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement