প্রতীকী ছবি
প্রায় দু’দশক টানা চলা বিবিএ (অনার্স) পাঠ্যক্রমটি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই মর্মে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি তার অধীন বিভিন্ন কলেজ ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে শিক্ষক ও পড়ুয়া মহলে। সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কিছু বক্তব্য রয়েছে তাঁদের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার পাঁচটি সরকার পোষিত কলেজ এবং চারটি বেসরকারি কলেজে ফি বছর প্রায় পাঁচশো পড়ুয়া এই পাঠ্যক্রমটি পড়েন। গত শিক্ষাবর্ষেও এই পাঠ্যক্রমে পড়ুয়া ভর্তি করা হয়েছে।
কিন্তু তা হলে এই পাঠ্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাঠ্যসূচি অনুযায়ী, বিবিএ (অনার্স) বলে কোনও বিষয় নেই। শুধুমাত্র বিবিএ রয়েছে। তাই পড়ুয়া-স্বার্থে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত।’’ তিনি আরও জানান, পরিবর্তে এই বছর থেকে ‘ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজ়’ (বিএমএস) নামে উন্নত ও আধুনিক একটি বিষয় এ বার যোগ করা হয়েছে।
কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ এবং বেসরকারি সংস্থার ডিরেক্টরদের মতে, এ পর্যন্ত এই পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা করে লক্ষাধিক পড়ুয়া চাকরি পেয়েছেন। ফলে, কলেজগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে পাঠ্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। অধ্যক্ষ ও ডিরেক্টরদের দাবি, এর ফলে একাধিক সমস্যা হচ্ছে—
প্রথমত, চলতি বছরে বিবিএ (অনার্স)-এ ভর্তি করা হবে, এই মর্মে প্রচার করা হয়ে গিয়েছে। ফলে, আগ্রহী পড়ুয়াদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। দ্বিতীয়ত, যে সব পড়ুয়া গত বছরে ভর্তি হয়েছেন তাঁরা পাঠ্যক্রমের শেষে কী ডিগ্রি পাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তৃতীয়ত, এই পাঠ্যক্রম পড়াতে সরকারের অনুমোদন নিয়ে যে সব শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের ভবিষ্যত কী হবে? চতুর্থত, কলেজে নতুন একটি পাঠ্যক্রম চালুর আগে কলেজ পরিচালন সমিতির অনুমোদন করিয়ে সেটি উচ্চ শিক্ষা দফতরে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হয়। উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি দল কলেজ পরিদর্শন করে সেই পাঠ্যক্রম পড়ানোর পরিকাঠামো আছে কি না তা পরীক্ষা করে। সন্তুষ্ট হলে তবেই সেই কোর্স পড়ানোর অনুমতি মেলে। তা দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ। সেখানে মাত্র দশ দিন পরে চলতি শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া ভর্তি করানো হবে। স্বভাবতই এতগুলি স্তর পেরিয়ে এ বছর কোনও অবস্থাতেই বিএমএস কোর্সে পড়ুয়া ভর্তি করা যাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া, ইউজিসি-র তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও রাজ্য এবং দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কী ভাবে বিবিএ (অনার্স) পড়ানো হচ্ছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
যদিও উপাচার্যের দাবি, ‘‘এই বিষয়টি আরও বেশি চাকরিমুখী। শুধু বিবিএ পাঠ্যক্রম পড়ানো যায় কি না, সে বিষয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সরব হয়েছেন শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের একাংশ।