বর্ধমান শহরে বামেদের প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
ন’বছর আগের পুর-নির্বাচন ছিল সিপিএমের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ লড়াই। সে বার ভোটের দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সকাল ১০টার মধ্যেই মাঠ ছাড়ে বামফ্রন্ট। এ বারের লড়াইটা অস্তিত্ব রক্ষার। একদা ‘লাল দূর্গ’ বর্ধমানে নির্বাচনের দিন যতই প্রতিকূল অবস্থা আসুক, দলের প্রার্থীরা মাটি কামড়ে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকবেন, দাবি করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বর্ধমান পুর নির্বাচনী কমিটির বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তাপস সরকার।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার জেলার ছ’টি পুরসভায় ভোট ঘোষণা করেছে। সন্ধ্যার মধ্যে প্রার্থী তালিকা জানিয়ে দিয়েছে বামফ্রন্ট। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব শ্রেণির মানুষ ও কম বয়সীদের মধ্যে থেকে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষমতায় এলে আমরা নাগরিকদের কী দিতে পারব, সেটাই প্রচারে তুলে ধরা হবে।’’ আজ, শুক্রবার কলকাতা থেকে তৃণমূল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির দাবি, কয়েক দিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে।
বর্ধমান পুরসভায় বামফ্রন্টের তালিকায় সিপিআইয়ের কোনও প্রার্থী নেই। তাপস সরকারের দাবি, বৈঠকে সিপিআই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না বলে জানিয়েছিল। সে কারণে ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিএম ২৯টি, ফরওয়ার্ড ব্লক চারটি ও আরএসপি দু’টি আসনে প্রার্থী দেবে বলে ঠিক হয়। এ দিন বর্ধমানের তিন নম্বর ওয়ার্ডে শুধু প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। গত বারের প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা ছ’জনকে এ বার মনোনয়ন দিয়েছে সিপিএম। ৬৫ শতাংশ প্রার্থীর গড় বয়স ৫০-এর নীচে। এসএফআইয়ের জেলা কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক দীপঙ্কর দে ও বর্তমান সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরীও প্রার্থী হয়েছেন। সিপিএমের দাবি, এর আগে এসএফআই থেকে সরাসরি কোনও পদাধিকারীকে ভোটের ময়দানে দল নামায়নি। তাপস বলেন, ‘‘২০১৩ সালে পুরভোটে সন্ত্রাস হয়েছিল। আমরা সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ বার সেটা চাইছি না।’’
কাটোয়া পুরসভাতেও গত ভোটে খাতা খুলতে পারেনি সিপিএম। ২০ ওয়ার্ডের ১৭টিতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। দলের তরফে অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্ত বাগচিরা জানান, শহরের বিশিষ্টজনেরা যদি ওই তিনটে ওয়ার্ডে দাঁড়াতে চান, তা হলে দল মনোনয়ন দিতে বা সমর্থন করতে পারে। বেশ কয়েকজন যুবককে প্রার্থী করা হয়েছে। সঞ্জীব দাস, কৌশিক দে-র মতো শিক্ষকেরাও রয়েছেন তালিকায়।
কালনা পুরসভার ১৮টি আসনের মধ্যে সিপিএমের দখলে ছিল ছ’টি। পরে, এক জন তৃণমূলে যোগ দেন। এ দিন প্রার্থী ঘোষণার সময়ে হাজির ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঞ্জু কর, কালনা শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। দু’টি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের নাম পরে ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রার্থী তালিকায় পুরনোদের মধ্যে তিন জনের নাম রয়েছে। শীলা রাজবংশী, ফুল সিদুই, প্রবীর পাল, সুজয়প্রসাদ সাহা, দেবাশিষ নাথদের মতো বহু নতুন মুখও আনা হয়েছে। বিধানসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ ১২ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন। এরিয়া কমিটির সম্পাদকের দাবি, দলের দীর্ঘ সময়ের কাউন্সিলর গৌরাঙ্গ গোস্বামীর অভাব থাকবে। তবে সর্ব শক্তি দিয়ে লড়বে দল। মেমারি ও গুসকরা পুরসভায় ১৬টি করে আসনে সিপিএমের দখলে রয়েছে দু’টি ও পাঁচটি আসন। এ দিন মেমারিতে ১৩টি ওয়ার্ডে ও গুসকরায় ১৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলের জেলা কমিটির সদস্য আলমগীর মণ্ডল বলেন, ‘‘যুবকদের সামনে রেখেই লড়াই করছি।’’