শহরের প্রাণকেন্দ্রে চলছে সভা। দূরে আটকে রয়েছে বেশ কিছু বাস। ছবি: উদিত সিংহ।
বামপন্থী ছাত্রদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহরের কেন্দ্র, কার্জন গেটে দেড় ঘণ্টা গাড়িঘোড়া আটকে সভা করল বামফ্রন্ট। সপ্তাহের প্রথম দিনেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেন শহরবাসী। আটকে পড়ল স্কুল ফিরতি বেশ কিছু বাসও।
একেই সকালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ পড়ুয়া মার্কশিটে ভুল সংশোধনের দাবিতে রেল স্টেশন থেকে মিছিল করে আসেন কার্জন গেট চত্বরে। সেখানে কিছুক্ষণ পথ অবরোধও করেন তাঁরা। ব্যস্ত সময়ে আচমকা মিনিট কুড়ি আটকে পড়াতেই অনেক অফিসযাত্রী, স্কুল পড়ুয়া, আরও বহু লোকজন মুশকিলে পড়েন। তার উপর দুপুরের পরেও আবারও বামফ্রন্টের রাস্তা আটকে সভা করায় মাত্রা ছাড়ায় অসন্তোষ।
সোমবার বীরহাটা থেকে স্টেশন পর্যন্ত এলাকায় দেড় ঘণ্টার উপর যানবাহন আটকে পড়ে। থমকে যায় স্কুলের বাস, টাউন সার্ভিস বাস, মালবাহী ট্রাক ও বহু গাড়ি। পৌনে চারটে নাগাদ সভা শেষ হওয়ার পরেও আরও কিছুক্ষণ যানজটে নাকাল হন শহরবাসী। ভিড়ে আটকে পড়া, গলসির সাঁকো গ্রামের বাসিন্দা কাজি মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘শক্তিগড় যাচ্ছিলাম কাজে। জানিনা যখন পৌঁছব আর কাজ হবে কী না।’’ তালিতের বাসিন্দা রামরতন কর্মকারও বলেন, ‘‘বেসরকারি অফিসে চাকরি করি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ডিউটি ছিল। সাড়ে তিনটেয় বাড়ি থেকে বেরিয়েও মনে হচ্ছে সময়ে পৌঁছতে পারব না।’’
যদিও সিপিএম নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয় সে জন্যই বিকেলে সভা করেছেন তাঁরা। তবে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের উপর যেভাবে অত্যাচার চলছে তাতে কড়া প্রতিবাদ করা ছাড়া উপায় নেই বলেও তাঁদের মত। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারের অভিযোগ, “তৃণমূল সরকার একদিকে সন্ত্রাস করছে। অন্যদিকে প্রশাসনিক স্তরে আমাদের কোনও দাবিই মেনে নিচ্ছে না। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে কয়লাখনি বেসরকারিকরণ হয়েছে। তাতে ওখানকার জনজীবনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঘরবাড়ি দখল হয়ে যাচ্ছে। অরণ্য কেটে ফেলা হচ্ছে নির্বাচারে। রাজনৈতিক ভাবে প্রতিদিন বাম সমর্থকদের পুলিশ ও তৃণমূলের যৌথ সন্ত্রাসের কবলে পড়তে হচ্ছে।” দলের বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকও বলেন, “কয়েকদিন আগে কলকাতার ধর্মতলায় মিছিলে জমায়েত হওয়া বামপন্থী ছাত্রদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্যের প্রতিবাদে বর্ধমানের এই বিজয়তোরণে জমায়েত করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল ছাত্র-যুবরা। তাঁদের ওপরও পুলিশ ফের লাঠিচার্য করে। অনেককে আহত হন। এর প্রতিবাদেই সোমবার এই পাল্টা সভায় আমরা প্রচুর মানুষকে জড়ো করে দেখিয়ে দিয়েছি মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ পারলে আমাদের লাঠিচার্য করে সরিয়ে দিক।” পুলিশ অবশ্য সভার ধারেকাছে এ দিন ঘেঁষনি। অনেক দূরে কাছারড় রোডে পুলিশের এসডিপিও কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল ও বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর খানের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল পুলিশ।
সমাবেশ থেকে আত্মঘাতী আলুচাষিদের দু ’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিও ওঠে। বেশ কয়েকজন আত্মঘাতী আলুচাষির পরিবারকে মঞ্চে দাঁড় করিয়ে বামফ্রন্ট নেতারা দাবি করেন, প্রশাসন ও সরকার এই ঘটনাগুলিকে অস্বীকার করবার চেষ্টা করছে। বলছে, কেউ মদ খেয়ে, কেউ পারিবারিক ঝামেলায় আত্মহত্যা করছেন। এ ছাড়া ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি দেওয়া, ফের ওই কাজ চালু করারও দাবি ওঠে। কয়লাখনি বেসরকারি বিল ২০১৫ বাতিল করা, কৃষি বিরোধী জমি অর্ডিন্যান্স বাতিল করা, ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানো, রাজের মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, নারী নির্যাতনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশিট কেলেঙ্কারিতে উপাচার্যের পদত্যাগেরও দাবি ওঠে। সিপিএম নেতারা জানান, বিএ, বিএসসি, বিকম পার্ট ২-এর নির্ভুল ফল প্রকাশ করতে হবে।
পুরভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগও ওঠে সভায়। অমলবাবু দাবি করেন, ‘‘জেলার সর্বত্র পুরভোটের প্রচারে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। প্রশাসনও নিরপেক্ষ নয়। যদি প্রশাসন পুরভোটের দিন নিরপেক্ষতা দেখায় তাহলে আমরা দেখিয়ে দেব মানুষ আমাদেরই নির্বাচিত করবেন।” জেলার চারটি পুরসভায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও ওঠে। সভায় হাজির ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ, আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী প্রমুখ।