CPIM

মতামত চেয়ে ফর্ম  নিয়ে দুয়ারে সিপিএম

‘আপনার মতামত’ শীর্ষক ১৭টি প্রশ্নে সাজানো ওই ফর্ম প্রাথমিক ভাবে দুর্গাপুর পুরসভার ৩ এবং ৪ নম্বর বরো এলাকার ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৮:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

একদা ‘শক্ত’ ঘাঁটিতে পর পর ভোটে রক্তক্ষরণ ঘটেছে সিপিএম-সহ বামেদের। তবে, পাখির চোখ দুর্গাপুর পুরসভা ভোট, মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। সে দিকে তাকিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে টানা নাগরিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করেছে সিপিএম। এ বার প্রশ্নমালা নিয়ে আজ, মঙ্গলবার থেকে ভোটারদের দুয়ারে হাজির হতে চলেছে সিপিএম!সেখানে বিভিন্ন নাগরিক বিষয়, স্বাস্থ্য পরিষেবা, রাজ্যে ‘দুর্নীতির’ নানা প্রসঙ্গে প্রশ্ন ও উত্তরের বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। যদিও, সিপিএমের এই প্রশ্নমালা-কর্মসূচিকে বিঁধেছে তৃণমূল ও বিজেপি।

Advertisement

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আপনার মতামত’ শীর্ষক ১৭টি প্রশ্নে সাজানো ওই ফর্ম প্রাথমিক ভাবে দুর্গাপুর পুরসভার ৩ এবং ৪ নম্বর বরো এলাকার ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। আজ, মঙ্গলবার থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পদযাত্রার মাধ্যমে বাড়ি-বাড়ি প্রশ্নপত্র পৌঁছনোর প্রক্রিয়া চলবে। পাড়ায়-পাড়ায় রাখা হবে ‘ড্রপ বক্স’। উত্তরপত্র জমা পড়বে সেই বাক্সগুলিতে। কর্মীরাও বাড়ি-বাড়ি ড্রপ বাক্স নিয়ে যাবেন। সেই প্রশ্নমালায় বলা হয়েছে, ‘পরিচয় উল্লেখ নাও করতে পারেন।’

এই সেই প্রশ্নমালা। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্নগুলির মধ্যে রয়েছে, ‘আপনার পাড়াতে গত দশ বছরে নতুন কেউ চাকরি পেয়েছেন’, ‘পাড়াতে কিসের সমস্যা’, ‘পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত স্বচ্ছ ভোট চান’ ইত্যাদি। পাশাপাশি, দুর্নীতি প্রসঙ্গেও নানা প্রশ্ন করা হয়েছে। সে সঙ্গে, সিপিএম সম্পর্কে পরামর্শ ও সমালোচনা থাকলে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, সিপিএমের এমন উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। উত্তর ২৪ পরগনায় এমন প্রশ্নমালা নিয়ে দুয়ারে হাজির হতে দেখা গিয়েছিল সিপিএম-কে। পাশাপাশি, সর্বশেষ নবান্ন অভিযানের সময়ে একই পদ্ধতিনেয় ডিওয়াইএফ।

Advertisement

কিন্তু দুর্গাপুরে এমন কর্মসূচি কেন? দুর্গাপুরের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বর বা আগামী বছর জানুয়ারিতে দুর্গাপুর পুরভোট হতে পারে। সে দিকে তাকিয়েই কি এমন আয়োজন? সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, “নাগরিক পরিষেবা, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে দুর্গাপুরের মানুষ অতিষ্ঠ। আমরা তাঁদের মতামত জানার চেষ্টা করছি। সামনেই পুরভোট। সেদিকে তাকিয়ে জনসংযোগেও জোর দেওয়া হচ্ছে।”

ঘটনা হল, দুর্গাপুর পূর্বে ১ থেকে ১০ ও ২৩ থেকে ২৮ এবং দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার মধ্যে ১১ থেকে ২২ ও ২৯ থেকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডগুলি রয়েছে। গত পুরভোটে একটি ওয়ার্ডেও জেতেনি সিপিএম-সহ বিরোধীরা। যদিও, সে ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। তা মানেনি তৃণমূল।তবে এর পরে, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও দেখা যায়, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়ার্ডগুলিতে শূন্য হাতেই ফিরতে হয় যথাক্রমে সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীকে। কার্যত ভরাডুবি হয় দুর্গাপুর পূর্বের ও দুর্গাপুর পশ্চিমের সব ক’টি ওয়ার্ডেই। দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে দুই প্রার্থী ভোট পান যথাক্রমে, ১৫.১ ও৯.১৬ শতাংশ।

— এই পরিসংখ্যানের কথা মনে করিয়ে দিয়েই সিপিএমের এই কর্মসূচির উদ্দেশে তোপ দেগেছে তৃণমূল ও বিজেপি। দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ সব করে প্রচারের আলো পেতে চাইছে সিপিএম। দুর্গাপুর-সহ রাজ্যের মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, এটাই বাস্তব সত্য।” দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়েরও প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল আমরা। মানুষ আমাদের উপরে ভরসা করছেন। সিপিএমের তাই এ সব করে লাভ নেই।”

যদিও, সিপিএম দু’দলের বক্তব্যকে আমল দেয়নি। তাদের বক্তব্য, এই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আদতে দুর্গাপুর পুরসভা ও রাজ্য প্রশাসনের নেতিবাচক দিকগুলিকে সামনে আনা হয়েছে। এর ফলে, শহরবাসী বিষয়গুলি নিয়ে আরওসচেতন হতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement